
আজকাল অনেক বাবা-মাই নিজেদের ব্যস্ততার কারণে শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেন। সেটা নিয়ে সময় কাটাতে কাটাতে তাদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়। দেখা যায়, স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরেই অনেক শিশু মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক অভিভাবকই বুঝতে পারেন না মোবাইল আসক্তি শিশুদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নিয়মিত স্ক্রিন টাইম শিশুদের চোখ, ঘুম, মনোযোগ এবং আচরণে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি কাটাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন—
১. সন্তানকে সময় দিন অধিকাংশ সময়ই শিশুরা একা থাকে। এ কারণে তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে। শিশু একাকীত্বে ভুগলে তা তার বেড়ে ওঠার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই যতটা সম্ভব শিশুকে সময় দিন। পারিবারিক আড্ডা বা গল্প বলার সময় নিয়ম করে রাখুন।
২. সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে দিন শিশুকে রোজ নিয়ম করে খেলতে নিয়ে যান। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে তারা বাস্তব জগতে আনন্দ খুঁজে পাবে। এতে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আগ্রহ কমবে।
৩. বিকল্প শখ তৈরি করুন পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকা, সাঁতার শেখার মতো সৃজনশীল কাজে শিশুদের যুক্ত করুন। এগুলো মন ভালো রাখে এবং মোবাইল নির্ভরতা কমায়।
৪. অভিভাবকের আচরণ গুরুত্বপূর্ণ অনেক অভিভাবকই কারণ ছাড়াই সেলফি তোলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রল করেন। অভিভাবকদের এমন আচরণ শিশুদেরও মোবাইলমুখী করে তোলে। তাই আগে নিজের মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনুন।
৫. গল্প ও খেলনার ব্যবহার বাড়ান গল্প শোনানো, খেলনা দিয়ে ব্যস্ত রাখা, রঙ তুলির খেলা, কাগজ কেটে হাতের কাজ করানো—এসব সৃজনশীল অভ্যাস শিশুদের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করে।
৬. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সীমা টানুন সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটানো আপনার অজান্তেই মানসিক চাপ বাড়ায়, যা শিশুর প্রতিও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিজের সময়ও নিয়ন্ত্রণে রাখুন। দিনে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি না।
৭. ঘুম ও রুটিন ঠিক রাখুন মোবাইল আসক্তির কারণে অনেক শিশু রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না। ফলে ক্লান্তি, বিরক্তি ও মানসিক চাপ দেখা দেয়। মোবাইল ব্যবহারের সময় এবং ঘুমের রুটিন নিশ্চিত করুন।
৮. পড়াশোনার সময় মোবাইল দূরে রাখুন হোমওয়ার্ক বা বই পড়ার সময় মোবাইল যেন সামনে না থাকে। পড়ার টেবিল থেকে মোবাইল দূরে রাখলে মনোযোগ বাড়ে।
৯. অনলাইন ক্লাস ও বিনোদনের সময় আলাদা করুন যদি অনলাইনে পড়াশোনা করতে হয়, তবে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন—এই সময়টুকুই মোবাইলের জন্য বরাদ্দ। ক্লাস শেষে মোবাইল রেখে অন্য কাজে যুক্ত করুন।
১০. ধৈর্য ধরুন, ধমক নয় শিশুকে ধমক না দিয়ে ধীরে ধীরে তার অভ্যাস পরিবর্তন করুন। একবারে মোবাইল বন্ধ না করে ধাপে ধাপে কমান। ভালো আচরণের জন্য তাকে উৎসাহ দিন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্যকর বিকাশ নিশ্চিত করতে মোবাইলের পরিবর্তে পরিবার, প্রকৃতি ও সৃজনশীলতায় সময় দিন।
রাজু