
ছবিঃ সংগৃহীত
বিটকে পুষ্টির এক প্রকৃত ভাণ্ডার হিসেবে ধরা হয়। এই গাঢ় লাল রঙের সবজি রক্তপ্রবাহ উন্নত করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো নানা উপকারে আসে। এতে রয়েছে ফলেট, আয়রন, পটাশিয়াম ও ভিটামিন C – যা রক্তস্বাস্থ্য বজায় রাখতে, শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২০২১ সালে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের দৈনিক কাঁচা বিট খাওয়ালে ৮ সপ্তাহের মধ্যে উপকারী পরিবর্তন ঘটে। যেমন: রক্তে শর্করার মাত্রা, HbA1c, লিভার এনজাইম, রক্তচাপ এবং হোমোসিস্টেইনের মাত্রা কমে যায়। সেইসঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন সেদ্ধ বিটও কম স্বাস্থ্যকর নয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে—বিট খাওয়ার সঠিক উপায় আসলে কী?
বিটের গুরুত্ব
বিট কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং আয়রন। বিশেষত ফলেট (ভিটামিন B9) সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ ফলেট হোমোসিস্টেইনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
কাঁচা বিটে যা থাকে (প্রতি ১০০ গ্রাম)
- ক্যালোরি: ৪৩
- কার্বোহাইড্রেট: ৯.৬ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৮ গ্রাম
- চিনি: ৬.৮ গ্রাম
- প্রোটিন: ১.৬ গ্রাম
- ফ্যাট: ০.২ গ্রাম
- ভিটামিন B9: ১০৯ µg
- ভিটামিন C: ৪.৯ mg
- পটাশিয়াম: ৩২৫ mg
- আয়রন: ০.৮ mg
- ম্যাগনেসিয়াম: ২৩ mg
কাঁচা বিটের উপকারিতা
কাঁচা বিটে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায়, ফলেট হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এতে থাকা বিটালেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমায়। বিটের নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে ও স্ট্যামিনা বাড়াতে কার্যকর। কাঁচা অবস্থায় এটি বেশি ভিটামিন C ধরে রাখে, যা ত্বক ও রোগ প্রতিরোধে উপকারী।
সেদ্ধ বিটে যা থাকে (প্রতি ১০০ গ্রাম)
- ক্যালোরি: ৪৪
- কার্বোহাইড্রেট: ১০ গ্রাম
- চিনি: ৭ গ্রাম
- প্রোটিন: ১.৭ গ্রাম
- ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- ভিটামিন B9: ৮০–১০০ µg
- পটাশিয়াম: ৩০০–৩২৫ mg
- ম্যাঙ্গানিজ: ২০ mg
- আয়রন: ০.৭–০.৯ mg
সিদ্ধ বিটের উপকারিতা
সেদ্ধ করার ফলে বিটের ফাইবার নরম হয়, ফলে হজমে সহজ হয়। যদিও ভিটামিন C কিছুটা কমে যায়, তবু এতে পটাশিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো মিনারেল থাকে, যা হৃদযন্ত্র, পেশি ও রক্তস্বাস্থ্যে সাহায্য করে। সেদ্ধ অবস্থাতেও নাইট্রেট থাকে, যা রক্তচাপ ও রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কাঁচা নাকি সিদ্ধ? কোনটি বেশি পুষ্টিকর?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা বিট বেশি পুষ্টিকর, কারণ এতে ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। তবে, সেদ্ধ বিট হজমে সহজ এবং এর স্বাদ তুলনামূলকভাবে মিষ্টি হয়। রান্নার সময় কিছু জল-দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ফলেট কমে যেতে পারে, কিন্তু অন্য পুষ্টিগুণ বেশিরভাগই বজায় থাকে।
বিট খাওয়ার ৪টি সহজ উপায়
জুস বা স্মুদি:
কাঁচা বিট, আপেল, গাজর বা কমলা একসাথে ব্লেন্ড করে পান করুন – এটি একটি অসাধারণ ডিটক্স ড্রিংক।
সালাডে ব্যবহার:
কাঁচা বিট কুঁচি করে লেটুস, ফেটা চিজ এবং বাদামের সঙ্গে মিশিয়ে সুস্বাদু সালাড তৈরি করুন।
বিটের সবজি বা ভাজি:
সেদ্ধ বিট ছোট টুকরো করে সর্ষে, কারি পাতা, নারকেল দিয়ে রান্না করুন।
পরোটার পুর বা হুমাস:
সেদ্ধ বিট ম্যাশ করে পরোটার পুর বানান বা হুমাসে মিশিয়ে দিন। এমনকি কেক বা ব্রাউনি বানাতেও ব্যবহার করতে পারেন।
বিট একটি দুর্দান্ত সুপারফুড, যেটি কাঁচা বা সেদ্ধ – যেভাবেই খান না কেন, শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় একটি স্থায়ী স্থান পেতে পারে।
মারিয়া