ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিদিনের ৬টি অভ্যাস আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে, বলছেন জেফ বেজোস

প্রকাশিত: ২০:০০, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:০১, ১২ জুলাই ২০২৫

প্রতিদিনের ৬টি অভ্যাস আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে, বলছেন জেফ বেজোস

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস যখন অর্থ, সাফল্য কিংবা জীবনধারার বিষয়ে কথা বলেন, তখন অনেকেই মনোযোগ দেন। কারণ তিনি শুধু ব্যবসায়িক সফলতা দিয়েই নয়, মানুষের আচরণ ও অভ্যাস সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণ দিয়েও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। তার মতে, অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে বড় কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন কিছু ছোট ছোট ভুলই অনেক সময় বড় আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই ধারণাটি অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কিন্তু যত বেশি আমরা তার পর্যবেক্ষণগুলো বিশ্লেষণ করি, ততই পরিষ্কার হয় প্রতিদিনের কিছু অচেতন সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতের আর্থিক গতিপথ বদলে দিতে পারে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন ৬টি দৈনন্দিন অভ্যাস বা ভুল আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্যকে নীরবে বাধাগ্রস্ত করছে, জেফ বেজোসের দৃষ্টিতে।

১. মূল্য নয়, সুবিধা কেনা
এক কাপ কফির জন্য কাছের ক্যাফেতে ঢুকে পড়েন শুধুই একটু সময় বাঁচাতে? এমনটা আমরা অনেকেই করি। কিন্তু বেজোস মনে করেন, বারবার সুবিধার পেছনে ছুটে মূল্যের হিসাব না রাখার এই প্রবণতা একটি বৃহত্তর আর্থিক অব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়।

হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ছোট ছোট খরচই দীর্ঘমেয়াদে বড় কেনাকাটার চেয়ে বেশি খরচের জন্ম দেয়। পরবর্তীবার কোনো কিছু কেনার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন এই খরচটা কি সত্যিকারের প্রয়োজন, নাকি শুধুই সাময়িক আরাম?

২. ছোট ফাঁকিগুলোকে অবহেলা করা
বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, “ছোট খরচগুলোর প্রতি সতর্ক থাকুন, একটি ছোট ছিদ্রও বিশাল জাহাজ ডুবিয়ে দিতে পারে।” জেফ বেজোসও এই কথার সাথে একমত। আমাদের প্রতিদিনের আর্থিক দুর্বলতার মূলেই থাকে সেই অবহেলিত ছোট ছোট খরচ।

জানি না আপনি খেয়াল করেছেন কিনা বিনা প্রয়োজনের সাবস্ক্রিপশন চার্জ, বা বারবার বেশি মূল্যের পণ্য কেনা, এসবই একত্রে বছরে হাজার হাজার টাকা অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ বছরে প্রায় ১৮,০০০ ডলার পর্যন্ত অপচয় করেন শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয় খরচে।

আজই একবার দেখে নিন আপনার মাসিক ব্যাংক বা কার্ড স্টেটমেন্ট আশ্চর্য হতে পারেন।

৩. অর্থ নিয়ে অস্বস্তিকর কথাবার্তা এড়িয়ে যাওয়া
অর্থের বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলাটা অনেক সময় অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায় হোক সেটা সঙ্গী, বন্ধু বা অফিসের বস। কিন্তু বেজোস মনে করেন, এই নীরবতা একটি বড় ভুল। কারণ অর্থ সংক্রান্ত আলোচনায় অনীহা থেকেই জন্ম নেয় ভুল সিদ্ধান্ত এবং হারিয়ে যায় উন্নতির সুযোগ।

একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পারিশ্রমিক বাড়ানোর কথা বলার ভয়েই অনেক সময় আপনি নিজেকে অবমূল্যায়িত করেন। অথচ শুরুতেই একটু সাহস দেখালে হয়তো দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া যেত।

৪. চাহিদা ও চাওয়া গুলিয়ে ফেলা
আপনি কি সত্যিই এই জিনিসটি প্রয়োজনের কারণে কিনছেন, নাকি হঠাৎ করেই ইচ্ছা হয়েছে বলে? এই প্রশ্নটি আমাদের নিজেদেরই প্রতিদিন করা উচিত। বেজোস পরোক্ষভাবে এই মনোভাবকেই চিহ্নিত করেছেন আর্থিক অনিয়মের একটি বড় উৎস হিসেবে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা প্রায়ই ‘চাওয়া’কে ‘প্রয়োজন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করি এবং বারবার অপ্রয়োজনীয় খরচ করি।

একবার নিজেকে সৎভাবে জিজ্ঞেস করুন এই কেনাকাটা কি সত্যিই জরুরি?

৫. অর্থনৈতিক জ্ঞান উপেক্ষা করা
অর্থ ও বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা উঠলেই আপনি কি একঘেয়ে মনে করে এড়িয়ে যান? বেজোস মনে করেন, এই অবচেতন এড়িয়ে চলার প্রবণতাও মারাত্মক। কারণ আর্থিক জ্ঞানের অভাব থেকে আসে ভুল সিদ্ধান্ত, যার মূল্য অনেক বেশি।

গ্লোবাল জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই সুদ, বিনিয়োগ কিংবা মৌলিক অর্থনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন। এই অজ্ঞতা নীরবেই আপনাকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে।

আজ থেকেই প্রতিজ্ঞা করুন প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি নতুন অর্থনৈতিক ধারণা শিখবেন।

৬. স্বল্পমেয়াদি চিন্তা
শেষত, বেজোসের মতে, স্বল্পমেয়াদি চিন্তাভাবনাই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। আপনি কি তাৎক্ষণিক সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ভবিষ্যতের স্থিতিশীলতার চেয়ে বেশি? তাহলে সাবধান হোন।

ক্রেডিট কার্ডে মিনিমাম পেমেন্ট দিয়ে নিজেকে বাঁচানো, বিনিয়োগ না করা কারণ তাৎক্ষণিক ফলাফল নেই—এসবই আপনার দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক উন্নয়নকে আটকে দেয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যারা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে চলেন, তারা শুধু আর্থিকভাবেই নয়, জীবনমানের দিক থেকেও অনেক এগিয়ে থাকেন।

আপনার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো ভাবুন সেগুলো ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিয়েছিলেন তো?


জেফ বেজোসের এই পরামর্শগুলো শুনে প্রথমে অনেক কঠিন মনে হতে পারে, কারণ আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই এই ভুলগুলো রয়েছে। কিন্তু ভালো খবর হলো এই বিষয়গুলো অনুধাবন করাই প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তে যদি একটু সচেতনতা আনা যায়, তাহলে তা আগামী দিনের আর্থিক পরিস্থিতিকে আমূল বদলে দিতে পারে। আজই একটি ভুল শুধরে দিন আগামীকাল আপনার জন্য হয়তো অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/43urrz8j

আফরোজা

×