ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

খেলাপি কমিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য ॥ শওকত আলী খান

অর্থনৈতিকি রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১২ জুলাই ২০২৫

খেলাপি কমিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে  যাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য ॥  শওকত আলী খান

.

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রধান উদ্দেশ্য হল সরকারের বিভিন্ন নীতি এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা, যা সাধারণত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। খেলাপি কমিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই এক মাত্র লক্ষ্য। 
ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সোনালী ব্যাংক পিএলসির সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. শওকত আলী খান জনকণ্ঠকে জানান, সোনালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অন্য সব ব্যাংকের চেয়ে ভালো রয়েছে। আমরা ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ দিয়ে থাকি। ফলে আমাদের খেলাপির পরিমাণ অনেক কম। সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক ছাড়া বড় কোনো ধরনের কোনো ঋণ নেই। হলমার্কের অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান। 
মো. শওকত আলী খান জানান, খেলাপি ঋণ আদায় এবং নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সিএমএসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গ্রাহক সেবার মানকে আধুনিক ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের অত্যন্ত দক্ষ ও বিচক্ষণ পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্টের যৌথ প্রচেষ্টায় সোনালী ব্যাংক অদূর ভবিষ্যতে একটি ব্যাবসায়িক সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছবে। আমানত, মুনাফা, ঋণ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্সে সোনালী ব্যাংকের অবস্থান টপ লেভেলে (শীর্ষ পর্যায়ে) আছে। এ ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে চাই। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই), কৃষি খাতে ঋণ রয়েছে। এ খাতে আরও ঋণ বাড়ানো হবে। তাই যারা ভালো ব্যবসা করতে চাইবে, তাদেরকে আমরা ঋণ দেব। নতুন করে বড় কোনো করপোরেট খাতে ঋণ দিচ্ছি না। তবে যেগুলো চলমান আছে, সেগুলো ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে পারে। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে অধিক সংখ্যক গ্রাহককে বিনিয়োগ সুবিধার আওতায় আনতে ঋণ দিচ্ছি। গ্রাহকরা ব্যাংকের প্রাণ। বৃহৎ বিনিয়োগের চেয়ে আমরা ছোট বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছি। এক্ষেত্রে রিটেইলার, এসএমই, কৃষি, গবাদি পশু, মসলা ও মসলাজাতীয় পণ্য, ফলজসহ বেশকিছু আইটেমের ঋণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখা প্রধানকে গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত গ্রাহকরা যেন বিনিয়োগ পেতে কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। রেমিটেন্স গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সিএমএসএমই খাতের ভূমিকা অপরিসীম।
বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই খাতের। খাতটি দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তৈরি ও দারিদ্র্য বিমোচনই সিএমএসএমই খাতের মূল লক্ষ্য। দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান এ খাতের। তাই আমরাও কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সিএমএসএসইতে ঋণের পরিমাণ বাড়াব। এছাড়া আমাদের পরিকল্পনা হলো, ওভারডিও, ক্লাসিফায়েড ও অবলোপনকৃত বিনিয়োগ থেকে আদায়ের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা। চলমান মামলাগুলো গতিশীল করা, স্থগিত হয়ে থাকা মামলাগুলোকে পুনরায় সচল করা। দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান, শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।
তিনি জানান, বিগত ১৬ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এই খাতকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে। ব্যাপক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে এবং সেগুলো বারবার পুনর্তফসিল করে প্রকৃত অবস্থা আড়াল করা হয়েছে। তাই তখন খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ঋণের আসল চেহারা বের হয়ে আসছে। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বাড়ছে। পরিকল্পনা তো অবশ্যই রয়েছে। রিকভারির ক্ষেত্রে আমারা বিভিন্ন ধরনের কমিটি করেছি। এছাড়া যতগুলো টুলস আছে যথাযথ নিয়ম মেনেই তা করছি। এক কথায় বলা যায় আমার ব্যাংকের বর্তমান টিমের একাগ্রতা আর শ্রমই সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার পুরো টিমকে উজ্জীবিত করতে পেরেছি এবং আমার একটি গোল আছে চেয়ারম্যান মহোদয় সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সে কারণেই এত বৈরি পরিবেশের মধ্যেও আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। সুতরাং আমার চেয়ারম্যান মহোদয় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের সকল সর্মকর্তা, কর্মচারী-সবার অবদান রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে  খেলাপি ঋণ ১৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারব। ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের দেশব্যাপী শাখা -১২৩৪টি শাখা, বিদেশে শাখা: ২টি শাখা রয়েছে। এটিএম বুথ, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট মাধ্যমে অত্যন্ত সুনাম ও আস্থার সাথে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে। দেশের কৃষি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, তৈরি পোশাক ও অবকাঠামো থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে  সোনালী ব্যাংক বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।  

প্যানেল

×