ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

অর্থনীতি বিভাগের সব খবর

ডলার সংকটে কমছে রিজার্ভ

ডলার সংকটে কমছে রিজার্ভ

হাসিনা সরকারের আমলের রেখে যাওয়া ডলার সংকট এখনো চলমান রয়েছে। এর মধ্যে আগের আমদানি করা পণ্যের অনেক বিল এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২২ জানুয়ারি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২৫ দশমিক ২২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে অর্থাৎ ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের শুরুতে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়।  বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নর এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। আবার বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার জোগানের চেষ্টা করছে। তবে আগের দায় পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।   রিজার্ভ সংকটের সমস্যা নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস প্রধানত ২টি। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ও গার্মেন্টস রপ্তানি থেকে আয়। সেই আয়ে কি গত ২ থেকে ৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, ধস নেমেছে? পরিসংখ্যান সেই কথা বলে না। বরং দেশের অস্থিরতার সময়েও প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে অতীতের চেয়ে অধিক অর্থ পাঠিয়েছেন। বর্তমান সময়েও রপ্তানিমুখী খাত কিছু সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেলেও তারা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে ধারাবাহিকতা রেখেছেন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ‘দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়লেও আমদানি ব্যয় না কমায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে। যে কারণে রিজার্ভ বৃদ্ধির বদলে তা কমে যাচ্ছে।’ এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও বিদেশী বিনিয়োগ কমছে। বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগতভাবে কমে যাওয়ার কাঠামোগত কারণের মধ্যে অন্যতম হলো; ১. ডলারের বিনিময় হার হুন্ডি মার্কেটের বিপরীতে কম হওয়া, ২. এলসি খোলার কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিশ্চিত করতে না পারা, ৩. ব্যাংকিং খাতের ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণচর্চা না থামায় এসবে ঋণের একাংশ পাচার হয়ে ডলার-সংকট বাড়া, ৪. খেলাপি ঋণ হুন্ডির স্থানীয় সরবরাহ চেইনে ঢুকছে, এতে বিদেশ থেকে ডলার দেশে আসছে না, পাচারকারীরা অনলাইন জুয়া ও ক্রিপ্টো ব্যবসায়ীরা ডলার বিদেশে রেখে তাঁদের বৈধ-অবৈধ চাহিদা মেটাচ্ছেন।

সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও চাল ভোজ্যতেলে উল্টা চিত্র

সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও চাল ভোজ্যতেলে উল্টা চিত্র

শাক-সবজির দামে স্বস্তি ফিরলেও উল্টোচিত্র বিরাজ করছে চাল ভোজ্যতেল ও মুরগির বাজারে। ভালোমানের প্রতি কেজি মিনিকেট নাজিরশাইল ও চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এ ছাড়া  বেড়েছে মুরগি ও মাছের দাম। আটা, ডাল, চিনি, ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কমেছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। আদা, রসুন ও অন্যান্য মসলা পাতির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে বেশিরভাগ সবজি এখন বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এতে সবজি বাজারে খুশি ভোক্তারা।  শুক্রবার ঢাকার বাজারে প্রতি  কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শিম ৩০ থেকে ৫০, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০, শসা ২৫ থেকে ৩০, উচ্ছে ও করলা ৫০ থেকে ৬০, মুলা ১৫ থেকে ২০, বরবটি ৫০ থেকে ৬০, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। প্রতি পিস ফুল কপি ও বাঁধাকপি মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং লাউয়ের পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরও দাম কমেছে আলুর। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় এসব সবজি ৮০-১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে ভোক্তাকে। ঢাকার খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপণ্য কিনছিলেন শাজাহানপুরের বাসিন্দা আজমল হোসেন। তিনি জানান, সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও উল্টোচিত্র বিরাজ করছে চাল, ভোজ্যতেল ও মুরগির বাজারে। উৎপাদন ও আমদানি ভালো হওয়ার পরও চালের দাম কমছে না।  তিনি জানান, চালের দাম না কমায় কষ্টে আছেন নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষ। এ ছাড়া শুল্ক কমানোর পরও ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। বরং প্রতি সপ্তায় একটু একটু করে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে। পাঁচ লিটারের বোতল সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৮৯০ টাকায়। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে বাজারে কঠিন নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে যাবে নিত্যপণ্যের বাজার। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের শুরু থেকেই এবার চালের বাজার ছিল চড়া। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে তা আরও বেড়ে যায়। এর পর আর স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। গত সপ্তাহে আরেক দফা বেড়েছে দাম। বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গত শুক্রবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭০ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫৫-৬৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) জাত ও মানভেদে বিক্রি হয়েছে কেজি ৭৫-৯০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের  কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ১০ টাকা।  এদিকে, ভরপুর উৎপাদন, শুল্ক কমে তলানিতে, আমদানির দরজাও খোলা, পাশাপাশি  জোরদার বাজার তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকারের এতসব আয়োজনেও বাগে আসছে না চালের বাজার। বিফলে যাচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। খাদ্যশস্য মজুতেরও আছে নিয়ম। অভিযোগ রয়েছে, সেই নিয়মের ধার না ধেরে হাজার হাজার টন চাল গুদামে ভরে রেখেছেন উৎপাদন এলাকার মিলার ও মজুতদাররা। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দামের ঘোড়া ছোটাচ্ছেন তারা। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধা পাওয়া বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। ঢাকার বাদামতলী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কাওরান বাজারের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীও রয়েছেন এই চক্রে। সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল বা বাজারে চালের কমতি নেই। সরকারকে চাপে রাখার  কৌশল হিসেবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে,  দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। তবে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টন। সে হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে ৩০ লাখ টনের মতো। এতে চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।  এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এর আগে বন্যায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি খাতে এখন চালের আমদানি বেড়েছে। কিন্তু এর কোন ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে চালের মজুত রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে সরকারের নিরাপত্তা মজুত হিসেবে সাধারণত ১১ লাখ টন চাল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে।  এদিকে, চালের মতো দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মুরগির বাজার বাড়তি। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০  থেকে ২২০ টাকায়। আর সোনালি জাতের মুরগির কেজি কিনতে হলে কেজিপ্রতি খরচ পড়বে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা। ডিমের বাজার স্থির রয়েছে। ফার্মের প্রতি ডজন ডিম কেনা যাবে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, চারদিকে শীতকালীন উৎসব বিশেষ করে পিকনিক, বিয়ে-শাদীসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বেড়ে যাওয়ায় মুরগির চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া বাজারে দেশি জাতের মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না। একটু বড় সাইজের প্রতি কেজি শৌল মাছ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বোয়াল, আইর ও চিতল ও ইলিশ মাছ কিনতে ভোক্তাকে বেশি টাকা কিনতে হচ্ছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতে শোল, বোয়াল, আইর ও চিতল মাছের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু  দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষ এসব মাছের স্বাদ নিতে পারবে না। তবে বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সব গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সব গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি

লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গার্মেন্টস বিভাগের সব কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেক্সিমকোর কর্মীরা। পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য শুরুর ও বিদেশীদের কার্যাদেশ প্রাপ্তির সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ার দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। কারখানা ও ব্যবসা চলমান রেখে সকল বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধের দাবিও জানান তারা। বৃহস্পতিবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ)-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বেক্সিমকো ফ্যাসন লিমিটেডের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্টস ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকরিজীবীকে লে-অফের আওতায় জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় জানুয়ারি- ২০২৫ পর্যন্ত বেতনাদি প্রদান করা হচ্ছে।

চলতি মাসে নয়, মুদ্রানীতি ঘোষণা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি

চলতি মাসে নয়, মুদ্রানীতি ঘোষণা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি

গত বছরের তুলনায় এবার শীতকালীন সবজির মূল্য অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এর পরও রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। কারণ চৈত্র মাসে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাবে। দেশে প্রায় তিন বছর হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এদিকে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার চিন্তা। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ালে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মুদ্রানীতি জানুয়ারির শেষ ভাগে হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ঘোষণা করা হবে। এবারের মুদ্রানীতির টার্গেট হলো টাইট মনিটারি পলিসি করা বা মুদ্রাস্ফীতি (ইনফ্লেশন) কমানো। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জনকণ্ঠকে বলেন, মনিটারি পলিসি নিয়ে এবার আমাদের কোনো চিন্তা নেই। আমরা অনেকটাই চিন্তামুক্ত। এখন বাজারে সব কিছুর দাম সাধারণ মানুষের  নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, অর্থবছরের প্রথম চার মাসের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬। এই হার গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। শুধু তা-ই নয়, এ সময় শিল্পের প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির ‘এলসি সেটেলমেন্ট’ কমেছে ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ ঋণপত্রের নিষ্পত্তি হয়েছে কম। ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমলে বাজারে জোগান কমে দাম বেড়ে যায়, এটাই অর্থনীতির চিরাচরিত নিয়ম। অন্যদিকে মূলধনী ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি কমলে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও সক্ষমতা কমে যায়। এ সবকিছুর প্রভাব পড়ে প্রবৃদ্ধির ওপর। বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরে যা ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামবে। সেটা হলে তা হবে দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি, কেবল করোনার সময় অর্থ্যাৎ ২০২০-২১ অর্থবছর বাদে। নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত পাঁচ মাসে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট করে তিন দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে যা ১০ শতাংশ। নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না, বরং এর প্রভাবে বাজারে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে।  বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও তলানিতে নেমে এসেছে, অর্থনীতিতে যার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন এক ধরনের স্ট্যাগফ্লেশন (নি¤œ প্রবৃদ্ধি+উচ্চ মূল্যস্ফীতি+উচ্চ বেকারত্ব) চলছে অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী মুদ্রানীতিতে কী পদক্ষেপ নেবে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে অনেকেই মনে করেন, উন্নত বিশ্বে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলেও আমাদের দেশে সম্ভব নয়। যেসব দেশের ৯০ শতাংশই ভোক্তাঋণ, সেখানে তা সম্ভব হতে পারে। তারা বাড়ি, গাড়িসহ নানা কাজে ঋণ নেন। ফলে সেসব দেশে সুদহার বাড়িয়ে ভোগব্যয় কমানো যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ৮৫ শতাংশ ঋণই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নেওয়া হয়।

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার চায় বাপা

বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার চায় বাপা

কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বর্ধিত মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কৃষি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস’ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যানকে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে বাপা। এ জন্য দ্রুতই তা প্রত্যাহারে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ব্যবসায়ীরা জানান, এনবিআর চেয়ারম্যানকে তারা বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব তুলে ধরেছেন এবং কিভাবে ভ্যাট ও শুল্ক না বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব বাড়ানো যায় তা তুলে ধরেছেন।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা।   এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-ডিসেম্বরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বা ৬ শতাংশ। রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।