দুর্বল ব্যাংককে আর টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে না, দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবারই একথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। কিন্তু সেই কথায় অনড় থাকতে পারেননি তিনি।
চলতি অর্থ বছরে এ পর্যন্ত ১২টি ব্যাংককে ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে টাকা ছাপানো, গ্যারান্টি ও বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে ডিমান্ড লোনের মাধ্যমে ১০টি ব্যাংক পেয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি ৯টি ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতিতে থাকা ১৯ হাজার কোটি টাকাও রূপান্তর করা হয়েছে ডিমান্ড লোনে।
সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যার পরিমাণ ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া তালিকায় আছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এবি ব্যাংক, বিসিবিএল, আইসিবি, বেসিক ও পদ্মা ব্যাংক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে আর কোনো ব্যাংককে ঋণ নয়। তবে বাস্তবে সেই নীতির বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি- অবস্থার বাস্তবতা বিবেচনায় এ সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এ অবস্থায় দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট যেমন বাড়ছে, তেমনি ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট এড়াতে ব্যাংকিং সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন আরও গভীরভাবে অনুভব করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, পুনঃঋণ নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলেই কেবল এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
কয়েক মাসের মধ্যে একীভূত হচ্ছে গ্লোবাল, ইউনিয়নসহ শরিয়াভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক। এই পাঁচ ব্যাংক মিলে হবে শরিয়াভিত্তিক একটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছেন এক্সিম ব্যাংকের পাশাপাশি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও। তারা বলছে, একীভূত নয়, একক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে চায় তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আপত্তি জানিয়েছে এই দুই ব্যাংক। তাদের সক্ষমতা ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘একীভূত হতে কোনো প্রকার আগ্রহ নেই। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে। আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। এই ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা রয়েছে। ফলে আমানত নিয়ে কোনো প্রকার চিন্তা নেই। এই ব্যাংকের অনেক শাখা ও উপশাখা রয়েছে।