
ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থা’ বা পিআর (PR) পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরও অনেক দল। তবে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থা হলো ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (FPTP)। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি আসনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীই বিজয়ী হন। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ভোট ভাগ হয় ২০%-২০%-২০%-৩০% হারে, তবে মাত্র ৩০% ভোট পেয়ে চতুর্থ প্রার্থী বিজয়ী হন। বাকি ৭০% ভোট কার্যত অনুপযোগী হয়ে যায়। এতে করে একক দল খুব কম ভোট পেয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সংসদে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।
অন্যদিকে, পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি দল নির্বাচনের আগে একটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। সারাদেশে দলটির মোট ভোটের অনুপাতে তারা সংসদে আসন পায়। যেমন, একটি দল যদি ৩০% ভোট পায়, তাহলে ৩০০ আসনের সংসদে তারা পাবে ৯০টি আসন। ফলে সংসদে ভোটের প্রতিফলন অধিক ন্যায্য হয় এবং ছোট দলগুলোরও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
বিএনপি এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে পিআর পদ্ধতির বিরোধিতার বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিলেও দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ব্যক্তিগতভাবে মতামত প্রকাশ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতি বাস্তবসম্মত নয়। এটি অত্যন্ত জটিল, এবং দেশের বাস্তবতায় এর কোনও ইতিহাসও নেই।” তিনি আরও যুক্তি দেন, এই পদ্ধতিতে ভোটাররা জানতেই পারবেন না কে হচ্ছেন তাদের সংসদ সদস্য, ফলে এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে এমপিদের কাছে দায়বদ্ধতার বিষয়টি হারিয়ে যাবে। পাশাপাশি তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, কিছু দল হয়তো নির্বাচন বিলম্বিত করতেই এই পদ্ধতির পক্ষে সাফাই গাইছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান খানও একইভাবে পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা বিতর্কিত নয়। তাহলে নতুন পদ্ধতির দরকার কী?” তার মতে, বাংলাদেশের মানুষ প্রচলিত ব্যবস্থার সাথে অভ্যস্ত এবং নতুন পদ্ধতি চালু করতে হলে পুরো নির্বাচনী কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে, যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও দাবি করেন, যারা পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তারা প্রচলিত ব্যবস্থায় সুবিধা করতে না পেরে এই পদ্ধতিতে সংসদে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এখনো পর্যন্ত ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় পিআর পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে আলোচনার টেবিলে এ ইস্যু এলে দলীয় অবস্থান থেকে বিএনপি মতামত দেবে বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
বিশ্বের ৯১টি দেশে বর্তমানে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশসহ ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে মতবিরোধ তীব্র। বিএনপি যেখানে এর বাস্তবতা নিয়ে সন্দিহান, সেখানে ছোট ও মাঝারি দলগুলো সংসদে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী বলেই মনে করছে।
সূত্র:https://youtu.be/P85Jy-W1I7A?si=i7KzC_JCl4BhHzkk
ছামিয়া