
ছবি:সংগৃহীত
হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (SCA) এমন একটি ভয়াবহ ঘটনা, যেখানে হৃদযন্ত্র হঠাৎ করে পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এই সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে, এবং চিকিৎসা না পেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু ঘটতে পারে।
তবে সময়মতো CPR (হার্টে চাপ দিয়ে বুক পাম্প করা) ও একটি যন্ত্র AED (অটোমেটেড এক্সটার্নাল ডিফিব্রিলেটর) দিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিলে অনেক সময় জীবন রক্ষা সম্ভব হয়।
হার্ট অ্যাটাক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এক নয়
অনেকেই ভাবেন হৃদরোগ মানেই হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু বাস্তবটা ভিন্ন। হার্ট অ্যাটাক হয় রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে, আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘটে হৃদয়ের বৈদ্যুতিক কার্যক্রমে সমস্যা হলে। তবে হার্ট অ্যাটাক থেকেও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সময় উপসর্গগুলো তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর হয়:
- হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়া
- নাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়া
- শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
- প্রতিক্রিয়া না থাকা
- কিছু ক্ষেত্রে আগাম উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যেমন:
- বুকের অস্বস্তি
- শ্বাসকষ্ট
- দুর্বলতা
- হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা (পালপিটেশন)
- তবে অনেক সময় একদম কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এটি ঘটে।
- কী করবেন যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়?
- যদি দেখেন কেউ অচেতন এবং শ্বাস নিচ্ছে না:
- তৎক্ষণাৎ ৯১১ বা স্থানীয় জরুরি সেবায় ফোন করুন
- CPR শুরু করুন – বুকের মাঝখানে দ্রুত ও জোরে চাপ দিন (প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার)
- AED থাকলে ব্যবহার করুন – এটি নিজে থেকেই জানিয়ে দেয় কবে শক দিতে হবে।
কেন হয় এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট?
এটি মূলত হৃদয়ের বৈদ্যুতিক সংকেতে গোলযোগের কারণে ঘটে। এই সময় হার্ট ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না।
সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন – যেখানে হার্টের নিচের চেম্বারগুলো এলোমেলোভাবে কাঁপতে থাকে।
যেসব হৃদরোগ থেকে এটা হতে পারে:
- করোনারি আর্টারি ডিজিজ (হৃদনালিতে ব্লক)
- হার্ট অ্যাটাক ও তার পরবর্তী ক্ষত
- কার্ডিওমায়োপ্যাথি (হার্ট বড় হয়ে যাওয়া)
- হৃদযন্ত্রের ভাল্বের রোগ
- জন্মগত হৃদরোগ
- Long QT syndrome ও Brugada syndrome (হৃদয়ের বৈদ্যুতিক অসামঞ্জস্য)
ঝুঁকির কারণ
- পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস
- ধূমপান
- উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল
- স্থূলতা বা ডায়াবেটিস
- বসে থাকা জীবনযাপন
- আগের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক
- বয়স বাড়া বা পুরুষ হওয়া
- ঘুমের সমস্যা (sleep apnea)
- মাদক সেবন
প্রতিরোধ করা যায়?
অবশ্যই। কিছু সাধারণ জীবনধারা মেনে চললেই এই মরণ ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব:
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
- ধূমপান ছাড়ুন
- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- হৃদরোগ পরীক্ষা করান
- জেনেটিক পরীক্ষা করুন, যদি পারিবারিকভাবে Long QT syndrome থাকে
যদি আপনার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাহলে চিকিৎসক ICD (implantable cardioverter-defibrillator) বসানোর পরামর্শ দিতে পারেন, যা হৃদয়ের অনিয়মিত স্পন্দন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈদ্যুতিক শক দেয়।
চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি চাইলে বাড়ির জন্যও AED কিনে রাখতে পারেন।
জীবন বাঁচাতে CPR ও AED ব্যবহারে প্রশিক্ষণ নেওয়া খুবই জরুরি। এক মুহূর্তের সঠিক সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে একটি জীবন।
মারিয়া