ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

আলঝেইমারের উপসর্গ ঠেকাতে সাহায্য করতে পারে গভীর ঘুম—গবেষণায় নতুন ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ২০:২৬, ১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:২৭, ১ জুলাই ২০২৫

আলঝেইমারের উপসর্গ ঠেকাতে সাহায্য করতে পারে গভীর ঘুম—গবেষণায় নতুন ইঙ্গিত

ছবি: সংগৃহীত।

আলঝেইমার রোগের মতো স্মৃতিভ্রষ্টতা প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে গভীর ঘুম—এমনটাই জানিয়েছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (UC Berkeley), স্ট্যানফোর্ড এবং UC Irvine-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে আলঝেইমার সম্পর্কিত পরিবর্তন থাকা সত্ত্বেও যারা পর্যাপ্ত গভীর ঘুম পায়, তারা স্মৃতিশক্তি পরীক্ষায় তুলনামূলক ভালো ফল করে।

২০২৩ সালের মে মাসে প্রকাশিত এই গবেষণায় অংশ নেয় ৬২ জন বয়স্ক, তবে মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি। গবেষকরা জানান, গভীর ঘুম—বিশেষ করে non-REM slow wave sleep—স্মৃতিশক্তি হ্রাসকে ঠেকাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

UC Berkeley-এর নিউরোসায়েন্টিস্ট ম্যাথিউ ওয়াকার বলেন, “গভীর ঘুমকে ভাবুন এক ধরনের লাইফ রাফট হিসেবে, যা স্মৃতিকে ভাসিয়ে রাখে, যাতে তা আলঝেইমারের ভারে ডুবে না যায়।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেক উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে ঘুমের মান উন্নত করা সম্ভব, এমনকি বয়স্কদের ক্ষেত্রেও। অতীতে গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ভালো ঘুম না হলে মস্তিষ্কে অ্যামিলয়েড-বিটা নামক একটি ক্ষতিকর প্রোটিন জমা হতে থাকে। এটি আলঝেইমারের একটি মূল চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মস্তিষ্কে আলঝেইমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রোটিন জমা বেশি, কিন্তু তারা পর্যাপ্ত গভীর ঘুম পায়—তারা পরদিন স্মৃতিশক্তি পরীক্ষায় ভালো করে। এর বিপরীতে, একই রকম প্রোটিন জমা থাকলেও যারা ভালো ঘুম পায় না, তাদের ফল খারাপ হয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ইতিবাচক প্রভাব শুধুমাত্র “non-REM slow wave sleep”-এর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, অন্য কোনো ঘুমপর্যায়ের ক্ষেত্রে নয়।

নেতৃস্থানীয় গবেষক জশফিয়া জাভেচ বলেন, “একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মস্তিষ্কজনিত পরিবর্তন থাকলেও আপনি বাধ্য নন স্মৃতিশক্তি হারাতে। আমাদের গবেষণা বলছে, ঘুম—বিশেষ করে গভীর ঘুম—এই প্রভাবকে প্রতিহত করতে সাহায্য করতে পারে।”

গবেষকরা আরও বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা দরকার, বছর ধরে গভীর ঘুমের মাত্রা বাড়ালে সেটি দীর্ঘমেয়াদে আলঝেইমারের ঝুঁকি কতটা কমায়।

যদিও ঘুমের ওষুধ ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের তরল পদার্থে অ্যামিলয়েড প্রোটিনের পরিমাণ কম দেখা গেছে, তবে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেক সময় এগুলো শুধু হালকা ঘুম এনে দেয়, প্রকৃত গভীর ঘুম নয়।

তাই ভালো ঘুম পেতে যা করা যেতে পারে: সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন পরিহার করুন, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন, ঘুমের আগে স্ক্রিন ব্যবহারে বিরতি দিন, গরম পানিতে গোসল করুন।

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ আলঝেইমারের মতো স্মৃতিভ্রষ্টতায় আক্রান্ত। এই রোগের প্রতিকার এখনো অমিল হলেও, বিজ্ঞানীরা আশা দেখছেন জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে উপসর্গগুলো বিলম্বিত বা নিয়ন্ত্রণে রাখার সুযোগে। আর এর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হতে পারে—নিয়মিত ও গভীর ঘুম।

সূত্র: সায়েন্স এলার্ট।

মিরাজ খান

×