
ছবি: সংগৃহীত।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ইমোতে ভিডিও কল দেওয়া, যৌন হয়রানি, কটুক্তি, বাজে ইঙ্গিত, কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, কল না ধরলে রেজাল্ট খারাপ করানো, নম্বর কম দেওয়া, ব্যক্তিগত রুমে ডাকা, বডি শেমিং সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়াও তিনি এক বিবাহিত ছাত্রীকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও ফ্রি-মিক্সিং এর উপকারিতা বোঝান বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর এসকল অভিযোগ উল্লেখ করে লিখিত দেন বিভাগটির অন্তত ডজনখানেক ছাত্রী। একইসঙ্গে তারা তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।
অভিযুক্ত শিক্ষক বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুুল ইসলাম। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টায় শিক্ষকরা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছিল। তবে এতোদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ঈদুল আযহার ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার দ্বিতীয় দিন (২২ জুন) বিভাগের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাকে বিরত রেখেছে বিভাগটি। তবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।
অভিযোগে এক ছাত্রী লেখেন, ‘স্যার আমাকে ইমোতে ভিডিও কল দেন। আমি কল রিসিভ না করায় পরে অডিও কল দেন। তখন তিনি বলেন, অনেকদিন তোমাদের দেখি না, তোমরা মোটা হয়েছো না চিকন হয়েছো দেখার জন্য ভিডিও কল দিচ্ছি। তারপর উনি বলেন, তোমার কি কথা বলার লোক আছে?’ আমি বলি না নেই। তখন তিনি বলেন, এখন বলছো কেউ নাই, কিছুদিন পর তো দেখবো ক্যাম্পাসে কোনো ছেলের হাত ধরে ঘুরছো।’ তাছাড়াও দাম্পত্য জীবন, ব্যক্তিগত শারীরিক ও প্রাইভেট পার্ট নিয়েও জিজ্ঞাসা করেন। এছাড়াও অনেক ছাত্রীকেই তিনি ভিডিও কল দিতেন বলে ছাত্রীরা জানিয়েছেন।
আরেক ছাত্রী লিখেন, স্যার একদিন আমাকে আলাদাভাবে রুমে ডেকে বলেন, তুমি ভালো বাসা পেলে আমাকেও একদিন রুমে দাওয়াত দিও। তোমাকে বলেছিলাম, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শারীরিক সম্পর্ক না থাকলে সংসার টিকে না। তুমি আমার কথা শুনোনাই।’ এসময় তিনি আমাকে বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ও ফ্রি-মিক্সিং এর উপকারিতা বোঝান।
অপর এক ছাত্রীকে ওই শিক্ষক বলেন, এত সুন্দর হয়ে কী লাভ? যদি কোনো বয়ফ্রেন্ডই না থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ওই শিক্ষকের দ্বারা হেনস্তার শিকার ছাত্রীদের অনেকেই বিবাহিত হওয়ায় তারা তাদের পরিবারের কথা ভেবে এতোদিন মুখ খোলেননি। কেউ কেউ তার যন্ত্রনায় সুইসাইডাল অ্যাটেমপ্ট নিতে চেয়েছিল। সাময়িক অব্যাহতি কোনো সমাধান নয়। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুুল ইসলাম বলেন, আমি বলছি একভাবে, বুঝছে আরেকভাবে। তারা আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এসব অভিযোগ করেছে। আমি মূলত সভাপতি থাকাকালে করোনাকালীন সেশনজট কমানোর উদ্যোগ নেই। সেজন্য শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের সাথে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলেতে হয়েছে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল হুদা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আপাতত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মে ২৬৮ তম সিন্ডিকেট সভায় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করে প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে সমকামিতা, যৌন হয়রানি, শিক্ষার্থী হেনস্তা, ছাত্রলীগের মিছিলে জোর করে পাঠানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।
সায়মা ইসলাম