ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

২০২৪-২০২৫ অর্থবছর

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড, কাস্টমসের আয় ৭৫ হাজার কোটি

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড, কাস্টমসের আয় ৭৫ হাজার কোটি

কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বছরে আমদানি ও রপ্তানি মিলে প্রায় ৩৩ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার ওঠানামা করেছে বন্দর জেটিতে। জাহাজও এসেছে আগের বছরের চেয়ে বেশি। আর দেশের একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আদায় ছাড়িয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি। 
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের শেষদিন সোমবার পর্যন্ত বন্দরে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। আগের অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অর্থবছর শেষ হওয়ার পনেরদিন বাকি থাকতেই চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ওঠানামা ছুঁয়েছিল পূর্ববর্তী বছরের হ্যান্ডলিংকে। এর আগের দুই বছরের চিত্র যথাক্রমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। সে সময় ছিল পুরানো পদ্ধতির খোলা পণ্য পরিবহন। পর্যায়ক্রমে কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন জনপ্রিয় হয়। এর কারণ সহজ বহন পদ্ধতি এবং পণ্যের নিরাপত্তা। চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৮ বছরের ইতিহাসে এবার হয়েছে সর্বোচ্চ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং।

দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায়, এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক। বন্দর সচিব জানান, অর্থবছরের শেষ পর্যায়ে এসে কাস্টমসে অসন্তোষ এবং কর্মসূচির কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। নইলে হ্যান্ডলিং আরও বেশি হতো।
চট্টগ্রাম বন্দরে এ বছর কার্গো (খোলা পণ্য) হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দরে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয় তার প্রায় ৭৫ ভাগই খোলা পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকারস, পাথর, কয়লা, তেল ও চাল, গমসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য। 
সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজও এসেছে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি। এ বছর জাহাজ হ্যান্ডেল হয়েছে মোট ৪ হাজার ৭৭টি। আগের বছর ছিল ৩ হাজার ৯৭১। বর্তমানে জাহাজের আকার বড় হওয়ায় প্রতি জাহাজে আগের তুলনায় বেশি কন্টেইনার পরিবাহিত হচ্ছে। 
কাস্টমসের আয় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ॥ দেশের অর্থনীতিতে একক বৃহত্তম রাজস্ব যোগানদাতা সংস্থা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তার সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি রাজস্ব আদায় করেছে ৭৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। এই আদায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা কম হলেও টাকার অঙ্কে গত বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জন্য এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। 
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পাদিত হয় দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি। এই বিপুল পণ্যের শুল্কায়ন হয়ে থাকে চট্টগ্রাম  কাস্টম হাউসে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর যেমন দেশের অর্থনীতির প্রাণ, তেমনিভাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এককভাবে সবচেয়ে বেশি রাজস্বের যোগান দিয়ে থাকে রাষ্ট্রের কোষাগারে।

×