
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা সমস্যায় ভুগছেন—তবে অনেকেই জানেন না যে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারই তাঁদের শারীরিক অস্বস্তির মূল কারণ। এটি শুধুমাত্র হজমের সমস্যা নয়, বরং এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা শরীরে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দুধে থাকা প্রাকৃতিক চিনি 'ল্যাকটোজ' ঠিকমতো হজম না হলে শরীর বিভিন্নভাবে সংকেত দিতে শুরু করে। নিচে তুলে ধরা হলো ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত:
১. মুখে ঘা বা আলসার:
অনেকেই জানেন না, কিন্তু নিয়মিত মুখে ঘা হওয়া ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার একটি গোপন লক্ষণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ, চিজ ও দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার মুখে ঘা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরুর দুধের প্রোটিন শরীরে বিরূপ ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যার ফলেই এমন সমস্যা দেখা দেয়।
২. চোখ লাল হয়ে যাওয়া:
গরুর দুধের প্রোটিনে অ্যালার্জি থাকলে চোখ লাল হওয়া, ফোলাভাব, চুলকানি—এসব দেখা দিতে পারে। যদিও এটি সরাসরি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা নয়, তবে অনেক ক্ষেত্রে একসঙ্গে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, যা উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. শরীরের অস্বাভাবিক ফোলা:
দুধে অ্যালার্জির কারণে ঠোঁট, চোখ বা মুখের চারপাশে হঠাৎ করে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। অনেক সময় শরীরে র্যাশ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, গলা আটকে আসা বা এমনকি গলা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মলের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে, যা জরুরি চিকিৎসার ইঙ্গিত।
৪. ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য:
ল্যাকটোজ হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম 'ল্যাক্টেজ' যাদের শরীরে কম থাকে, তারা দুধ খাওয়ার পর ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। কারও ক্ষেত্রে অন্ত্রে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়ে খাবারের গতি ধীর করে দেয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে।
৫. পেট ফুলে যাওয়া:
দুধ খাওয়ার পর পেট ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি—এটি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। হজম না হওয়া ল্যাকটোজ অন্ত্রে জমে গ্যাস উৎপন্ন করে, যার ফলে পেট ফাঁপা, ব্যথা ও অস্বস্তি তৈরি হয়।
৬. মাথাব্যথা ও ক্লান্তি:
ল্যাকটোজ হজমজনিত সমস্যা হলেও এর প্রভাব শুধু পেটে সীমাবদ্ধ থাকে না। মাথাব্যথা, ঘুমে ব্যাঘাত, ক্লান্তি, মনোযোগে ঘাটতি, এমনকি অবসন্নতাও দেখা দিতে পারে। শরীরের প্রদাহ বা বিপাকীয় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে এই উপসর্গগুলোর সৃষ্টি হতে পারে।
৭. অতিরিক্ত গ্যাস হওয়া:
ল্যাকটোজ হজম না হলে অন্ত্রে তা ফারমেন্ট হয়ে হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে অতিরিক্ত ঢেকুর, গ্যাস ও পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে।
৮. পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা:
অবাক লাগলেও, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স শরীরে প্রদাহ তৈরি করে পেশি ও গাঁটে ব্যথার কারণ হতে পারে। দুধের চিনি হজমে সমস্যা হলে শরীরের সামগ্রিক ইনফ্লেমেশন বেড়ে গিয়ে ব্যথা বাড়তে পারে।
৯. পেটব্যথা ও ক্র্যাম্প:
দুধ খাওয়ার কিছু সময় পর যদি তীব্র পেটব্যথা, মোচড়ানো অনুভব বা অস্বস্তি হয়, তবে সেটি ল্যাকটোজ হজম না হওয়ার কারণেও হতে পারে। একইসঙ্গে গ্লুটেন ইনটলারেন্স থাকলে লক্ষণগুলো আরও জটিল হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
যদি নিয়মিত দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর উপরোক্ত উপসর্গগুলো অনুভব করেন, তবে তা হালকাভাবে না দেখে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে এলিমিনেশন ডায়েট বা দুধবিহীন খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করে লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
সূত্র: ব্রাইট সাইড।
মিরাজ খান