ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্তন ক্যান্সারের সূক্ষ্ম ৬টি লক্ষণ যেগুলো অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২ জুলাই ২০২৫

স্তন ক্যান্সারের সূক্ষ্ম ৬টি লক্ষণ যেগুলো অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে

ছবি: সংগৃহীত।

স্তন ক্যান্সার সাধারণত ফোলা গাঁট বা স্তনের আকৃতি পরিবর্তনের মতো স্পষ্ট উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, কিছু উপসর্গ এতটাই সূক্ষ্ম যে সেগুলো সহজেই উপেক্ষিত হয়। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হওয়া দেরি হয়, যখন চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর হতে পারত। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্তন ক্যানসারের এমন ছয়টি লক্ষণ রয়েছে যা অনেকেই এড়িয়ে যান—কিন্তু একেবারেই এড়ানো উচিত নয়।

১. স্তনে অস্বাভাবিক ফোলাভাব:
কোনো পরিষ্কার কারণ ছাড়া হঠাৎ স্তন ফুলে উঠলে এবং সেই সঙ্গে চামড়ায় পরিবর্তন দেখা দিলে এটি ইনফ্ল্যামেটরি ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের ক্যান্সারে সাধারণত গাঁট দেখা যায় না। বরং ক্যানসার কোষগুলো ত্বকের লসিকা (লিম্ফ্যাটিক) পথ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ফোলাভাব, লালচে ভাব এবং ভারী অনুভব হতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া:
রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া অনেক সময় অল্প মনে হলেও এটি ক্যানসারের সূক্ষ্ম লক্ষণ হতে পারে। শরীরে সংক্রমণ বা উচ্চ জ্বরের প্রতিক্রিয়ায় এমন ঘাম দেখা দেয়। এছাড়া ক্যানসার নিজেও বা তার চিকিৎসা অনেক সময় হঠাৎ অস্বাভাবিক ঘাম সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

৩. স্তনে চুলকানি:
নিয়মিত চুলকানি অনেকেই লোশন বা সাধারণ ওষুধে উপশমের চেষ্টা করেন। কিন্তু যদি চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কোনো ওষুধে সাড়া না দেয়, তবে এটি ইনফ্ল্যামেটরি ব্রেস্ট ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ এই ধরনে ফোলা গাঁট না থাকলেও চুলকানি প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

৪. ব্যথা অনুভব করা:
মাঝেমধ্যে স্তনে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক হলেও যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, বিশেষ করে স্তন বা বগলের পাশে, তবে তা ইনফ্ল্যামেটরি ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের ক্যান্সারে গাঁট না থেকে ব্যথা, জ্বালাভাব বা চুলকানিই মূল লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। আক্রান্ত স্তনটি অন্যটির তুলনায় উষ্ণ অনুভূত হতে পারে।

৫. চামড়ার গঠনে পরিবর্তন:
স্তনের চামড়ায় হঠাৎ করে মোটা ভাব, গর্ত হওয়া বা টানটান হয়ে যাওয়ার মতো পরিবর্তন ক্যানসারের সতর্ক সংকেত হতে পারে। একে ‘কমলা খোসা’ ধরনের টেক্সচার বলা হয়। ক্যানসার কোষ লসিকা নালিকে বন্ধ করে দিলে তরল জমে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চামড়ার গঠনে এমন কোনো পরিবর্তন হলে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

৬. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
যদি আপনি নিয়মিত চরম ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে তা শুধু ব্যস্ততা বা ঘুম কম হওয়ার ফল নাও হতে পারে। এটি মেটাস্ট্যাটিক বা সেকেন্ডারি স্তন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে—যেখানে ক্যানসার স্তনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজ করাও কঠিন হয়ে যায়, শরীর একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো।

আপনার শরীর নিজের মতো করে সংকেত দেয়। কিন্তু অনেকেই এসব প্রাথমিক লক্ষণ অবহেলা করেন, ফলে পরবর্তীতে ক্যানসার গুরুতর আকার ধারণ করে। তাই শরীর যদি কোনোরকম অস্বাভাবিকতা জানায়, বিশেষ করে স্তনের ক্ষেত্রে, তাহলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা করান।

সূত্র: ব্রাইট সাইড।

মিরাজ খান

×