
ছবি: সংগৃহীত
চিনি পরিমিতভাবে খাওয়া যেতে পারে, তবে বাস্তবে অনেকেই দৈনিক নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যান। অতিরিক্ত চিনি শরীরের ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণের সঙ্গে স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, দাঁতের সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি—এমন নানা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে।
এছাড়া অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা পরে হঠাৎ করে কমে গিয়ে ক্লান্তি ও আরও বেশি চিনি খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা সৃষ্টি করে—এভাবে শরীরে একটি ক্ষতিকর চক্র গড়ে ওঠে।
চিনি খাওয়া বন্ধ করলে বা কমিয়ে দিলে এসব ঝুঁকি তো কমেই, বরং এর পাশাপাশি শরীরে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও আসে।
একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ শেঠি টানা ৩০ দিন চিনি ছাড়ার যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়, তা তুলে ধরেছেন। নিচে দেওয়া হলো তারই একটি তালিকা—
১. মুখের ফোলা ভাব কমে যায়
চিনি কমালে শরীরে ফোলাভাব ও পানি জমার প্রবণতা কমে। ফলে মুখের মেদ ও স্ফীতভাব কমে আসে এবং মুখ বেশি চিকন দেখায়।
২. চোখের ফোলাভাব ও পায়ে পানি নামা কমে
অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ তৈরি করে। ডা. শেঠি বলেন, “চিনি শরীরে চর্বি ধরে রাখে, যার ফলে চোখের নিচে ফোলাভাব এবং পায়ে পানি নামার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। চিনি ছাড়লে এগুলো কমে যায়।”
৩. কোমরের মেদ কমে
চিনি ছাড়লে পেটের মেদ এবং লিভারের চর্বিও কমতে থাকে। ডা. শেঠির ভাষায়, “লিভারে চর্বি কমতে শুরু করায় পেটের চর্বিও হ্রাস পায়।”
চিনি কমালে ক্যালোরি গ্রহণ কমে, খাওয়ার আগ্রহ নিয়ন্ত্রণে থাকে—ফলে ওজন কমানো সহজ হয় এবং ওজন বাড়ার ঝুঁকিও কমে।
৪. হজমে উন্নতি
চিনি ছাড়লে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা হয়, ফলে হজম ভালো হয় এবং শরীরের প্রদাহ কমে।
৫. ত্বক হয় সুস্থ ও উজ্জ্বল
যাদের ত্বকে ব্রণ বা লালচে ভাব থাকে, তাদের ত্বক পরিষ্কার হয়ে উঠতে শুরু করে। ডা. শেঠি বলেন, “চিনি ছাড়া জীবন যাপন করলে ত্বক আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।”
কীভাবে চিনির পরিমাণ কমাবেন? কিছু কার্যকর টিপস:
-
প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো চিনি থাকে, তাই কেনার সময় প্যাকেটের লেবেল ভালোভাবে পড়ুন।
-
চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে—যেমন ফল, শাকসবজি, পূর্ণ শস্য, ও লিন প্রোটিন।
-
মিষ্টিজাত পণ্যের পরিবর্তে (অমিষ্ট) বিকল্প বেছে নিন—যেমন টক দই, বাদামের দুধ, বা ডেজার্ট।
-
কোমল পানীয়, ফলের জুস, এবং এনার্জি ড্রিংকের মতো পানীয় এড়িয়ে চলুন—এগুলো চিনির বড় উৎস।
-
যদি আপনি খুব বেশি চিনি খান, তাহলে ধীরে ধীরে কমান। হঠাৎ পুরোপুরি বন্ধ করলে শরীর খারাপ লাগতে পারে।
-
চিনির তীব্র ইচ্ছা হলে বিকল্প হিসেবে ফল, ডার্ক চকোলেট, বা ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে পারেন।
মাত্র ৩০ দিন চিনি বাদ দিয়ে দেখুন, শরীর-মন দুটোতেই এক ইতিবাচক পরিবর্তন টের পাবেন। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে আজই শুরু করুন!
আবির