ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

পানির ঘাটতি মানেই বিপদের শুরু, স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত জলপান করুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ জুলাই ২০২৫

পানির ঘাটতি মানেই বিপদের শুরু, স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত জলপান করুন

ছ‌বি: প্রতীকী

মানবদেহের অধিকাংশ অংশজুড়ে রয়েছে পানি। এটি শুধু তৃষ্ণা মেটানোর উপাদান নয়, বরং দেহের প্রতিটি কোষ, কলা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। শরীরের বিপাকক্রিয়া, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি পরিবহন, কোষের গঠন, হজম এবং রক্তচলাচল প্রতিটি প্রক্রিয়াই নির্ভর করে পানির ভারসাম্যের ওপর। অথচ আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি সাধারণ প্রবণতা দেখা যায়, তৃষ্ণা না পেলে পানি না খাওয়ার। এটি শরীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর প্রতিদিন ঘাম, মূত্র, নিঃশ্বাস এবং মলত্যাগের মাধ্যমে পানি হারায়। এই হারানো পানি পূরণ না করলে শরীর ধীরে ধীরে পানিশূন্য হয়ে পড়ে, যাকে বলে ডিহাইড্রেশন। ডিহাইড্রেশন আমাদের শরীরে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মনোযোগের অভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের রুক্ষতা, এমনকি কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাসের মতো সমস্যার জন্ম দেয়। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি পান করলে এই সব সমস্যার অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

পানি হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। অনেকেই দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, যার একটি প্রধান কারণ হলো শরীরে পর্যাপ্ত পানির ঘাটতি। পানি খাদ্যকে ভেঙে সহজে শোষণযোগ্য করে তোলে এবং অন্ত্রে স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, পানি শরীর থেকে টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ অপসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে কিডনি ও ইউরিনারি সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান অত্যন্ত জরুরি।

ত্বকের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা রক্ষায়ও পানির অবদান অপরিসীম। আমরা অনেক সময় বাইরের যত্নে নানা প্রসাধনী ব্যবহার করি, কিন্তু ভেতর থেকে হাইড্রেশন না থাকলে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, প্রাণহীন এবং মলিন। পরিমিত পানি পান করলে ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র থাকে এবং প্রাকৃতিক জৌলুস ফিরে পায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণেও পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সময় আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে আলাদা করতে পারি না। ফলে তৃষ্ণার সময়েও অপ্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে ফেলি। খাবারের আগে এক গ্লাস পানি পান করলে তা পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। একইসঙ্গে পানি শরীরের বিপাকক্রিয়াকে সচল রাখে, যা শরীরের ক্যালোরি খরচ বৃদ্ধিতে সহায়ক।

তবে শুধু পানি পান করলেই হবে না, সেটি করতে হবে নিয়ম মেনে এবং সচেতনভাবে। অনেকেই একবারে অনেকটা পানি পান করেন, যা শরীর সহজে শোষণ করতে পারে না। বরং সারাদিনে অল্প অল্প করে পানি পান করা ভালো। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ১–২ গ্লাস পানি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে বা পরে পানি পান হজমে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে বেশি পানি পান না করাই ভালো, তবে এক ঘণ্টা আগে এক গ্লাস পানি উপকারী হতে পারে।

সাধারণত দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করাই যথেষ্ট। তবে কেউ যদি গরম জায়গায় থাকেন, শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন, অথবা ঘাম বেশি হয়— তাহলে তার পানি চাহিদা আরও বেশি হতে পারে। যারা বেশি সময় অফিসে থাকেন বা মনোযোগী কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটি পানির বোতল সবসময় হাতের কাছে রাখা। এতে মনে পড়লে বারবার হাত বাড়িয়ে পানি পান করা সহজ হয়।

প্রযুক্তি নির্ভর জীবনধারায় ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সেই অভ্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো পানি পান। এটি এমন এক উপকারি অভ্যাস, যা অল্প সচেতনতায় গড়ে তোলা সম্ভব এবং যা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন চাইলে আজ থেকেই পানি পানের অভ্যাসকে গুরুত্ব দিন। স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে একটি সাধারণ গ্লাস পানি।

এম.কে.

×