
ছবি: সংগৃহীত
নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। একই পদে দুই ব্যক্তির দাবির জেরে গত ২৯ জুন কলেজে এক রকম ‘চেয়ার যুদ্ধ’ শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন বর্তমান অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের কক্ষে প্রবেশ করেন কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন। তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে মাহবুব আলমকে চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। মাহবুব আলম তাতে রাজি না হলে উত্তেজনা শুরু হয় এবং একপর্যায়ে ইমামুল হোসেন তার পাশেই একটি চেয়ার টেনে বসে পড়েন। এ সময় দুই পক্ষের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের একাংশ জানান, মুহূর্তেই কলেজের ভেতর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীরা ভীত হয়ে পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মানুষজন কলেজ গেটে ভিড় জমান।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের আগস্টে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী মিছিল-মিটিং করে। এরপর তৎকালীন ইউএনও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অধ্যক্ষের পদ শূন্য হওয়ায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করে সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন কমিটির তৎকালীন সভাপতি লুৎফর রহমান।
তবে মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় তার পদত্যাগকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং ফজলে হুদা বাবুলকে নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেয়।
পরে ৮ মে এক সভায় অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে মাহবুব আলমকে পুনরায় অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল করেন।
জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন দাবি করেন, হাইকোর্টে রিট করার ফলে বর্তমান অ্যাডহক কমিটি স্থগিত হয়েছে। ফলে আগের সভাপতি লুৎফর রহমান তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই ভিত্তিতেই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানান।
অন্যদিকে মাহবুব আলম বলেন, “তারা কোনো বৈধ পরিপত্র দেখাতে পারেননি। হাইকোর্ট কেবল তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশনা রয়েছে। এখনো রায়ের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে আগের কমিটি কীভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়, তা বোধগম্য নয়।”
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের চেয়ার দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে।
তারা অবিলম্বে সমস্যার সমাধান চেয়ে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়াশোনা করতে চাই। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।”
বর্তমান সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, “হাইকোর্টে রিট হয়েছে, উভয় পক্ষের শুনানি শেষে যে রায় আসবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে। এর আগেই জোর করে চেয়ার দখলের চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।”
এই ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দ্রুত ও কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন যাতে কলেজে শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।
মুমু ২