ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কফাঁদ এড়াতে যে কৌশল অবলম্বন করবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ৩ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কফাঁদ এড়াতে যে কৌশল অবলম্বন করবে বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাক শিল্প, চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যেই চার দফা কৌশল প্রণয়ন করেছে।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক বিদেশ নীতিতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে ৯ এপ্রিল থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তিন মাসের সময় দিয়ে তা ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়,  আলোচনার সুযোগ রেখে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তড়িঘড়ি করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ ও ৪ জুলাই বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসটিআর (United States Trade Representative) এর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন।
লক্ষ্য –শুল্ক হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত করা।

 

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, শুল্ক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ চারটি কৌশল বিবেচনায় নিচ্ছে:

1. মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস
   -বাংলাদেশ যেসব মার্কিন পণ্য আমদানি করে, সেগুলোর ওপর শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
   -বিশেষভাবে পোশাক খাতে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল— তুলা আমদানিতে শুল্কছাড় বিবেচনায় রয়েছে।

2. অশুল্ক বাধা কমানো
   - আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রশাসনিক বা প্রযুক্তিগত জটিলতা দূর করার পরিকল্পনা রয়েছে।

3. বেসরকারি খাতকে উৎসাহ
   - বেসরকারি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রণোদনার চিন্তা করা হচ্ছে।

4. সরকারি আমদানি বৃদ্ধি
    রাষ্ট্রীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করা হতে পারে।

 

২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য, যেখানে আমদানি করেছে মাত্র ২২১ কোটি ডলারের পণ্য।
এই বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জন্য মার্কিন বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে,

“এমন শুল্ক আরোপের ফলে যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারায়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে পোশাক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

 

বাংলাদেশের নেওয়া কৌশলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কতটা সফল হবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে একথা স্পষ্ট, বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনতে হলে কূটনৈতিক দক্ষতার পাশাপাশি প্রয়োজন দুরদর্শিতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

ছামিয়া

×