ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

ব্র্যান্ড প্রমোটিং পেশার উত্থান এবং বিপিইসির ডিজিটাল বিপ্লব

মো. আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০০:২১, ৪ জুলাই ২০২৫

ব্র্যান্ড প্রমোটিং পেশার উত্থান এবং বিপিইসির ডিজিটাল বিপ্লব

বিজ্ঞাপন ও বিপণনের জগতে সময়ের পরিক্রমায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। একসময় যেখানে বিলবোর্ড, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন কিংবা পত্রিকার পেইড ক্যাম্পেইনের ওপর নির্ভর করা হতো, সেখানে এখন মানুষ বেশি আস্থা রাখে “রিয়েল প্রমোটিং”-এ। একজন ব্যবহারকারী যখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোনো পণ্যের কথা বলেন, সেটিই ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই মনোভাবের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে একটি নতুন পেশা—ব্র্যান্ড প্রমোটিং। আর এই পেশাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী অনলাইন কমিউনিটি—ব্র্যান্ড প্রমোটার্স ও এন্টারপ্রেনার্স কমিউনিটি (BPEC), যা ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম বৃহৎ ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

২০২২ সালের ২২ মে ‘এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (EDF)’–এর তত্ত্বাবধানে যাত্রা শুরু করে বিপিইসি। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে—যা কেবল পরিসংখ্যানগত সাফল্য নয়, বরং গুণগত মানেও এক যুগান্তকারী ধাপ। এখানে যুক্ত হয়েছেন কনটেন্ট নির্মাতা, উদ্যোক্তা, লাইভ উপস্থাপক, মডেল, ডিজিটাল প্রমোটার এবং অন্যান্য সৃজনশীল পেশাজীবীরা। প্রতিদিন শতাধিক পোস্টের মাধ্যমে সদস্যরা নিজেদের পণ্য, সেবা ও সাফল্যের গল্প তুলে ধরছেন—ফলে একদিকে নতুন উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন উৎসাহ, অন্যদিকে গড়ে উঠছে একটি সুসংহত ডিজিটাল ইকোসিস্টেম।

বিপিইসি নিজেকে একটি সাধারণ ফেসবুক গ্রুপে সীমাবদ্ধ না রেখে পরিণত হয়েছে একটি নীতিনির্ভর, পেশাদার ও পরিচ্ছন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। অনুমোদিত লাইভ সম্প্রচার, নির্ধারিত ফর্ম পূরণ সাপেক্ষে হায়ারিং পোস্ট, প্রোডাক্ট প্রমোশন এবং প্রমোটারদের যথাযথ স্বীকৃতির মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে বিভ্রান্তিকর তথ্য, অসংলগ্ন কনটেন্ট কিংবা স্প্যাম পোস্ট সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

এই প্ল্যাটফর্ম কেবল উদ্যোক্তাদের জন্য নয়, বরং ব্র্যান্ড ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও তৈরি করছে একটি নির্ভরযোগ্য ট্যালেন্ট পুল। যারা নিজস্ব কণ্ঠ, ক্যামেরা উপস্থিতি ও কনটেন্ট দক্ষতার মাধ্যমে একটি পণ্যের গল্প বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে পারেন—তারাই এখন ব্র্যান্ড প্রমোটিং পেশার মূল চালক। এদের একটি বৃহৎ অংশই তৈরি হচ্ছে বিপিইসির ছায়াতলে।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন পণ্যের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে ডিজিটাল প্রমোটারদের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। প্রোডাক্ট রিভিউ, লাইভ ডিসকাউন্ট অফার ও সোশ্যাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রমোটাররা সরাসরি বিক্রয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন। ফ্যাশন হাউস, কসমেটিকস, হেলথকেয়ার, ই-কমার্স এমনকি কর্পোরেট ব্র্যান্ডগুলোও এখন দক্ষ প্রমোটারদের অনুসন্ধানে আছে। বিপিইসি এই চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে এক আদর্শ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশে এমন অনেক তরুণ-তরুণী আছেন, যারা প্রচলিত চাকরির বাজারে জায়গা খুঁজে পান না। তাদের জন্য ব্র্যান্ড প্রমোটিং হতে পারে একটি স্বাধীন, সৃজনশীল ও লাভজনক পেশা। বিপিইসির সদস্যদের মধ্য থেকেই অনেকে ইতোমধ্যে হয়েছেন সফল ফ্রিল্যান্স প্রমোটার, কেউ হয়েছেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, আবার কেউ শুরু করেছেন নিজস্ব উদ্যোগ।

এই ডিজিটাল রূপান্তরের সময়টিতে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ অংশগ্রহণ। ব্র্যান্ড প্রমোটিংকে আনুষ্ঠানিক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া গেলে এটি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য নতুন আয়ের উৎস হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

বিপিইসি প্রমাণ করেছে—একটি ফেসবুক গ্রুপ কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং তা হতে পারে পেশা গঠনের প্ল্যাটফর্ম, উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্র এবং এক বিশাল ডিজিটাল বিপ্লবের সূচনা বিন্দু। এখন সময় এসেছে এই সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেওয়ার, এবং জাতীয় উন্নয়নের ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার।

Mily

×