ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:১৯, ৪ জুলাই ২০২৫

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, ফলে তালেবান শাসনাধীন কাবুল প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ হলো রাশিয়া। আফগানিস্তানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনভ তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কির কাছে নতুন আফগান রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন, যা দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ার অংশ।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

এদিকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুতাক্কি এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “রাশিয়ার এই সাহসী সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্য উদাহরণ হবে। এখন যখন স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাশিয়া প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে।”

এই পদক্ষেপে ওয়াশিংটনের নজর থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফ্রিজ করে রেখেছে এবং তালেবান সরকারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে আফগান ব্যাংকিং খাত কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

তালেবান আগস্ট ২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে দেশটি ত্যাগ করে। রাশিয়া ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানকে "ব্যর্থতা" বলে অভিহিত করেছিল এবং তখন থেকেই তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেয়।

২০২২ ও ২০২৪ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত রাশিয়ার অর্থনৈতিক ফোরামে তালেবান প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তালেবানের শীর্ষ কূটনীতিক মস্কোয় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র” বলে অভিহিত করেন, বিশেষ করে আইএস খোরাসান (আইএসকেপি) এর বিরুদ্ধে, যারা আফগানিস্তান ও রাশিয়ায় একাধিক প্রাণঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে।

২০২৫ সালের এপ্রিলে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসেবে যে তালিকাভুক্ত করেছিল, তা প্রত্যাহার করে নেয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ তখন বলেছিলেন, “কাবুলের নতুন শাসকগোষ্ঠী একটি বাস্তবতা, এবং আমাদের উচিত আদর্শবাদ নয়, বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করা।”

তালেবান ১৯৯৪ সালে আফগান গৃহযুদ্ধের সময় গঠিত হয়েছিল, তখন তারা ছিল মূলত মার্কিন-সমর্থিত মুজাহিদিন যোদ্ধাদের একটি অংশ যারা ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।

১৯৮০ সালের সেই সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনে এবং অনেকের মতে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ত্বরান্বিত করে। ২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে তাদের “সন্ত্রাসী” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, বিশেষ করে উত্তর ককেশাসে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনের অভিযোগে।

তবে ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার পর রাশিয়া ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো নতুন করে কৌশল নির্ধারণে বাধ্য হয়। আফগানিস্তানকে গ্যাস পরিবহনের ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনাও রাশিয়া প্রকাশ করেছে।

যদিও এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি, জাতিসংঘ তালেবান সরকারকে "দ্য ফ্যাক্টো অথরিটিজ" নামে অভিহিত করে থাকে।

এ স্বীকৃতির ফলে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব আরও দৃঢ় হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সূত্রঃ আল জাজিরা 

নোভা

আরো পড়ুন  

×