ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ ঘিরে রহস্য! ফোন শেষে ইউক্রেনে নজিরবিহীন ড্রোন হামলা পুতিনের

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩৪, ৪ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ ঘিরে রহস্য! ফোন শেষে ইউক্রেনে নজিরবিহীন ড্রোন হামলা পুতিনের

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার রাতভর চলা এই ভয়াবহ হামলায় বহু আবাসিক ভবন ও স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হয়, যেখানে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে "কোনো অগ্রগতি হয়নি।"

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানায়, টানা ১৩ ঘণ্টার হামলায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর দাবি, রাশিয়া ৫৩৯টি ড্রোন ছুড়েছিল, যার মধ্যে ৪৭৬টি ভূপাতিত করা হয়েছে। এছাড়া ১১টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া হয়।

রাতভর কিয়েভ শহরে ড্রোনের শব্দ ও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে থাকে চারপাশ। হাজার হাজার মানুষ রাত কাটান বাংকারে, সাবওয়ে স্টেশন কিংবা পার্কিং লটে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, "কিয়েভে এ এক ভয়াবহ, নির্ঘুম রাত। এখন পর্যন্ত অন্যতম ভয়ঙ্কর।" প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে "দেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বিমান হামলা" বলে অভিহিত করেন।

জেলেনস্কি বলেন, "আমাদের শহরগুলোতে প্রথম বিমান হামলার সাইরেন বাজতে শুরু করেছিল ঠিক তখনই, যখন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছিল। এটা স্পষ্ট, রাশিয়ার যুদ্ধ থামানোর কোনো ইচ্ছা নেই।"

হামলায় বিভিন্ন এলাকায় বহু ভবনে আগুন লাগে, ধ্বংস হয় বহু বাড়িঘর। কিয়েভের রেলপথ ও পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় প্রতি রাতেই রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেন জানায়, জুন মাসেই রাশিয়া ৩৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র, ৮০টির মতো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ৫ হাজার যুদ্ধ ড্রোন এবং ৫ হাজার গ্লাইডিং বোমা ব্যবহার করেছে।

এর আগে, ঠিক পাঁচদিন আগে রাশিয়া ৫৩৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আরেকটি রেকর্ড গড়েছিল।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ফোনালাপ করেন। এরপর তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ট্রাম্প বলেন, "আমাদের মধ্যে দীর্ঘ কথা হয়েছে। ইরানসহ আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও কথা হয়েছে। তবে আমি মোটেও খুশি নই।"

তিনি আরও বলেন, "আমি কোনো অগ্রগতি করতে পারিনি। একেবারেই না।" ট্রাম্প জানান, তিনি শুক্রবার সকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলবেন। পুতিনের সাড়া নিয়ে তিনি "খুবই হতাশ।"

এদিকে, হামলার ঠিক আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের কিছু অংশ স্থগিত করেছে। বিশেষ করে, বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো বন্ধ রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ও বৈদেশিক সহায়তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্তের কারণে।

ট্রাম্প স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র মজুদ রক্ষার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরুর পর ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ড্রোন, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রকেট লঞ্চার, রাডার, ট্যাংক ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে তারা।

তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগের সেই অকুণ্ঠ সমর্থন এখন আর নেই।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি আলোচিত হয়নি। তবে ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা তুলেছিলেন। জবাবে পুতিন বলেন, রাশিয়া তার যুদ্ধ লক্ষ্য থেকে পিছু হটবে না।

আবির

×