
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) নামক ভাইরাসজনিত রোগে গবাদি পশুর মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ঈদুল আযহার আগে থেকেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়লেও যথাযথ সরকারি পদক্ষেপের অভাবে তা এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গরু ও বাছুরের মৃত্যুর খবর মিলছে।
গ্রামে গ্রামে আতঙ্ক, প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ
দেবীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, গবাদি পশুর মালিকরা চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। কেউ হারিয়েছেন একাধিক পশু, কেউবা দেখছেন প্রতিদিন সংক্রমণের বিস্তার। এক খামারি বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম সাধারণ জ্বর। পরে শরীরে গুটি দেখা দিলে বুঝলাম বড় কিছু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গরুটিকে আর বাঁচানো গেল না।”
বিশেষ করে ছোট বাছুরদের ক্ষেত্রে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। শুরুতে জ্বর, এরপর গায়ে গুটি, ফুলে যাওয়া ও দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অসুস্থ পশুরা অল্প সময়েই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে।
অদক্ষ চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য, বিপদে খামারিরা
সংক্রমণের সুযোগে মাঠে নেমেছে কিছু অপ্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সবিহীন পশু চিকিৎসক। অভিযোগ উঠেছে, তারা পশুকে ইনজেকশন দিলেও কোন ওষুধ দিচ্ছেন, তা বোঝার উপায় নেই।
এক স্থানীয় খামারি জানান, “ওরা একেক পশুর জন্য ৪০০-৫০০ টাকা নেয়, কিন্তু ইনজেকশন কী দিল বোঝা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী ছিল ছোট বাছুর, যারা শেষ পর্যন্ত বাঁচেনি।”
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বক্তব্য
দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও জানান,“গবাদিপশুর জ্বর কমাতে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখতে জীবাণুনাশক ও প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা জরুরি।”
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “সচেতনতা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ রোগ খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। যদিও সরকারিভাবে এখনও ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না, তবে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে।”
জরুরি পদক্ষেপের দাবি খামারিদের
এ অবস্থায় খামারিরা পড়েছেন চরম সংকটে। কেউ কেউ গবাদি পশু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাঁরা দ্রুত সঠিক চিকিৎসা, সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
“আর দেরি করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে”, বলছেন স্থানীয় কৃষকরা।
Mily