
.
গত বছরের তুলনায় মজুত বেশি থাকার পরও বাড়ছে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম। চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাছের রাজা ইলিশ দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এদিকে চাল ও সবজির দাম বাড়লেও কমেছে মুরগি-ডিম ও পামওয়েলের দাম। ডাল, চিনি, আটা, পেঁয়াজ ও আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মাছের দাম বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, কাপ্তান বাজার, মুগদা বাজার ও খিলগাঁও সিটি করপোরেশন কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতেও চালের দাম বেড়েছে।
টিসিবির তথ্যমতে, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা দাম বেড়ে প্রতিকেজি স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল ৬০-৬৫ এবং কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল খুচরা বাজারে ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে চালের দাম। অথচ এ বছর আমনের বাম্পার ফলন ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গত বছরের চেয়ে চালের মজুত বেশি রয়েছে। আমদানিও সন্তোষজনক। অভিযোগ রয়েছে চালের দাম বাড়ার পেছনে, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ ঢাকার বাদামতলী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আসলে দাম বাড়ার পেছনে তাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি মার্কেট থেকে বেশি দামে কিনে তাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সদ্য শুরু অর্থবছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন গুদামে চাল ও গমের মজুত রয়েছে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন লাখ টন বেশি। সরকারি মজুত, সংগ্রহ ও বিতরণ পরিস্থিতি সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই দেশে চাল ও গমের মোট মজুত ছিল ১৪ লাখ ৭৩ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত ছিল ১০ লাখ ৬০ হাজার টন এবং গম ৪ লাখ ১৩ হাজার টন। নতুন অর্থবছরের শুরুতে চালের মজুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার টনে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত ও আমদানি গমের মোট সংগ্রহের তুলনায় বিতরণ বেশি হওয়ায় গমের মজুত কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার টনে।
জানা গেছে, মাছের রাজা ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে এই মাছটির মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমান খুচরা বাজারে এককেজি সাইজের প্রতিটি ইলিশ মাছ মান ও জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া ৭০০-৮০০ গ্রামের প্রতিটি ইলিশ কিনতে ভোক্তাকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ইলিশের সঠিক দাম নির্ধারণের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। ইলিশের বাড়ি হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরসহ যেসব জেলায় ইলিশ মাছ বেশি ধরা পড়ে, সেসব জেলায় দাম নির্ধারণের প্রস্তাবের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন সম্প্রতি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইলিশের দাম নির্ধারণের বিষয়ে আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলাম। ভোক্তা পর্যায়ে ইলিশের দাম নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ আছে। ইলিশের দাম ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আমরা সরকারকে একটা গোপনীয় প্রতিবেদন দিই প্রায় সময়ই জেলার বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। এখানেও আমরা গোপনীয় প্রতিবেদনটা মন্ত্রিপরিষদে পাঠাই। সেখানে আমরা বলেছি সরকারের সঙ্গে যেন এটা নিয়ে আলোচনা করে যে ইলিশের দাম আসলে ভোক্তার ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। সেই রিপোর্ট আমরা যখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাই, তারা আবার প্রধান উপদেষ্টা বরাবর উপস্থাপন করেছে। তখন তিনিও এটার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। এর আগে গত ৩০ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় ইলিশ আহরণ, মজুত ও বিক্রয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছিলেন, ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৬০-৮০ টাকার ওপরে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম রয়েছে। বর্ষায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দামই কেজিতে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম দুই সপ্তাহ আগে ৪০-৫০ টাকা ছিল। বরবটি ও কাঁকরোলের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে ৮০-১০০ টাকা হয়েছে। ধরনভেদে বেগুন ৮০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো। বিক্রেতাদের হিসাবে বর্তমানে ৬০-৮০ টাকার আশপাশে দাম রয়েছে টমেটো, বরবটি, কাঁকরোল, বেগুন, করলা, ঢ্যাঁড়স, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও কচুর লতির দাম। কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে কেবল পেঁপে, মিষ্টিকুমড়াসহ হাতে গোনা দু-চারটি সবজি। অবশ্য কাওরান বাজার বা বড় পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক কম। সপ্তাহের অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়। কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া দাম কমে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় এ দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০-৮০০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা। মাছের মধ্যে প্রতি কেজি চাষের রুই ৩৮০-৪৫০, তেলাপিয়া ২৫০-২৮০, পাঙাশ ২০০-২৫০, কই ২৮০-৩০০, পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।