ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

বিয়ের আগে যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করানো উচিত

প্রকাশিত: ০৮:০৬, ৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:১১, ৫ জুলাই ২০২৫

বিয়ের আগে যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো করানো উচিত

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো ভবিষ্যৎ দম্পতি এবং তাদের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, জেনেটিক রোগ বা সংক্রমণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার তালিকা দেওয়া হলো:

১. ব্লাড গ্রুপ এবং আরএইচ ফ্যাক্টর পরীক্ষা: রক্ত ​​গ্রুপ এবং আরএইচ ফ্যাক্টর (Rh factor) পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি স্ত্রীর Rh নেগেটিভ এবং স্বামীর Rh পজিটিভ হয়, তবে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা 'আরএইচ ইনকম্প্যাটিবিলিটি' নামে পরিচিত। এটি নবজাতকের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। আগে থেকে জানলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

 

২. থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং: থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তবে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এই পরীক্ষাটি রোগটি নির্ণয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।

 

 

৩. যৌনবাহিত রোগ (STD) পরীক্ষা: হেপাটাইটিস বি ও সি (Hepatitis B & C), এইচআইভি (HIV), সিফিলিস (Syphilis), গনোরিয়া (Gonorrhea), ক্ল্যামাইডিয়া (Chlamydia) ইত্যাদির মতো যৌনবাহিত রোগের পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। এই রোগগুলো যদি ধরা না পড়ে এবং চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং সঙ্গীর মধ্যেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিছু রোগ গর্ভাবস্থায় শিশুর মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

৪. জেনেটিক বা বংশগত রোগ স্ক্রিনিং: কিছু রোগ যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ বা কিছু নিউরোমাসকুলার ডিসঅর্ডার বংশগত হতে পারে। পরিবারের ইতিহাসে এমন কোনো রোগের উপস্থিতি থাকলে, জেনেটিক কাউন্সেলিং এবং পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।

৫. ফার্টিলিটি (প্রজনন ক্ষমতা) পরীক্ষা: যদি দম্পতি সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করেন, তবে প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষা করানো যেতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর মান (Semen Analysis) এবং নারীর ক্ষেত্রে ডিম্বস্ফোটন ও হরমোন প্রোফাইল পরীক্ষা করা যেতে পারে। এটি ভবিষ্যতের যেকোনো প্রজননগত সমস্যার জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করে।

 

 

৬. ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ পরীক্ষা: জীবনযাত্রাজনিত রোগ যেমন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা উচিত। এই রোগগুলো অনিয়ন্ত্রিত থাকলে গর্ভধারণ এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৭. হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনেশন স্ট্যাটাস:  যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে, তবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত। এটি একটি যৌনবাহিত রোগ এবং মারাত্মক লিভার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৮. অন্যান্য পরীক্ষা:

 রুবেলা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা (নারীর জন্য): রুবেলা (জার্মান হাম) গর্ভবতী নারীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং শিশুর জন্মগত ত্রুটি ঘটাতে পারে। যদি প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকে, তবে গর্ভধারণের আগে টিকা নেওয়া উচিত।  সাধারণ রক্ত ​​পরীক্ষা (CBC): রক্তস্বল্পতা বা অন্য কোনো রক্তের সমস্যা আছে কিনা তা জানতে সাহায্য করে।  মূত্র পরীক্ষা (Urine Analysis): কিডনি বা মূত্রনালীর কোনো সংক্রমণ আছে কিনা তা জানতে।

পরীক্ষা করানোর গুরুত্ব:

  • ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: এই পরীক্ষাগুলো ভবিষ্যৎ দম্পতির স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়, যা পরিবার পরিকল্পনা এবং জীবনযাত্রার ধরন নির্ধারণে সহায়ক হয়।

  • রোগ প্রতিরোধ: অনেক রোগের সংক্রমণ এবং বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

  • সুস্থ প্রজন্ম: বংশগত রোগ সম্পর্কে জেনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, যা সুস্থ প্রজন্ম তৈরিতে সাহায্য করে।

  • মানসিক শান্তি: স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দম্পতির মধ্যে মানসিক শান্তি এবং আস্থা তৈরি করে।

সবচেয়ে ভালো হয়, একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিজেদের স্বাস্থ্যগত ইতিহাস এবং পারিবারিক ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে কোন পরীক্ষাগুলো করানো উচিত, তা নির্ধারণ করা।

সাব্বির

×