ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

‘তোদের বিপ্লব শেষ’— বলেই পেটানো হয় বৈষম্যবিরোধীদের!

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:১৮, ৪ জুলাই ২০২৫

‘তোদের বিপ্লব শেষ’— বলেই পেটানো হয় বৈষম্যবিরোধীদের!

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

চোখ বন্ধ করলেই বারবার ভেসে উঠছে সেই ভয়াল রাতের দৃশ্য— স্লোগানের গর্জন, হঠাৎ পুলিশের বর্বর লাঠিচার্জ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিদুয়ান সিদ্দিকী এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে। সারা শরীর জখম, মাথায় মারাত্মক আঘাত। চিকিৎসকদের ভাষ্য, তার সুস্থ হতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।

ঘটনার শুরু গত ১ জুলাই রাত। পটিয়া থানার মোড়ে মোমবাতি প্রজ্বলনের পর অবস্থান কর্মসূচিতে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এ সময় রাঙামাটির ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর তালুকদারকে দেখে তারা পুলিশে সোপর্দ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পটিয়া থানার ওসি জায়েদ নূর তাকে গ্রেপ্তার করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ক্ষুব্ধ ছাত্ররা দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখনই ওসি জায়েদ নূরের নেতৃত্বে শুরু হয় পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ। কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্র আহত হন, গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিতে হয় তৌকির ও সাইফুল ইসলামকে।

প্রথম দফার লাঠিচার্জে আহত ছাত্ররা পরে থানার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করতে গেলে আবার হামলায় নামে পুলিশ। এবারও পিছু হটেনি রিজার্ভ পুলিশ ও পটিয়া থানা— দুই বাহিনী একসঙ্গে চালায় লাঠিচার্জ। সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার মোরশেদ আলম ও কর্ণফুলির ওসমান গনি আহত হন।

এই দফায় সবচেয়ে নির্মমতার শিকার হন আন্দোলনের নেতা রিদুয়ান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “আমাকে ঘিরে ধরে বলে, ‘তোদের বিপ্লব শেষ’। এরপর শুরু হয় লাঠি, বুটের লাথি, রাইফেলের বাট দিয়ে মারধর। আমি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যাই মাটিতে।”

পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রিদুয়ানকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে। মাথায় গুরুতর জখম ছাড়াও শরীরজুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। অন্যদিকে, সাইফুল ইসলাম, সাঈদুলসহ আরও ৪/৫ জনকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঘটনার পরদিন ২ জুলাই সকালে পটিয়া থানার সামনে অবস্থান নেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে ছাত্ররা বাইপাস মডেল মসজিদের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। চার দফা দাবি তুলে বিক্ষোভ চালিয়ে যান তারা।

সন্ধ্যায় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। রাতেই ওসি জায়েদ নূরকে প্রত্যাহার করে ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। তার স্থলে নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান যুযিৎসু যশ চাকমা।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রিদুয়ান বলেন, “ওসি জায়েদ নূর পটিয়ায় আসার পর থেকে মামলা বাণিজ্য করে কোটি টাকা কামিয়েছে। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে, তাদেরই হয়রানি করেছে। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে পিটিয়েছে।”

এই ঘটনার জেরে আন্দোলন থেমে নেই। এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সংস্কারসহ চার দফা দাবিতে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান।

ছাত্ররা বলছেন, “আমরা থামব না। যতোদিন না দাবি পূরণ হয়, ততদিন রাস্তায় থাকব।”

এম.কে.

×