
ভাষার জন্য যিনি পাকিস্তানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছিলেন, স্বাধীনতার আগে যিনি ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মুখ খুলেছিলেন—সেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আজ নিজ ভিটায়ই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যেতে বসেছেন।
১৯৪৮ সালে করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে দাঁড়িয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন, ‘‘বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা!’’ সেই ভাষণ ছিল ভাষা আন্দোলনের বীজ। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে—তার সেই কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকার বাড়িটি পড়ে আছে ভুতুড়ে অবস্থায়, স্যাঁতসেঁতে দেয়াল, ভেঙে পড়া ঘর আর স্মৃতিহীন এক নিঃস্ব বাস্তবতা।
ভাষা আন্দোলনের চার বছর আগে বাংলা ভাষার পক্ষে সর্বপ্রথম প্রস্তাব দেওয়া এই মানুষটি ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। তাঁর মরদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাঁর স্মৃতিতে একটি জাদুঘর গড়ার ঘোষণা এসেছিল ২০১০ সালে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন বলছে, বাড়িটি ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। অথচ গবেষকরা বলছেন—এ বাড়ি ইতিহাস, এ বাড়ি আত্মপরিচয়ের অংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়িটির সামনে নেই কোনো নামফলক, ভেতরে নেই কোনো ইতিহাসের চিহ্ন। দীর্ঘদিন ধরে সুজন মিয়ার পরিবার সেখানে থাকেন। জাহানারা বেগম বলেন, “আমরা শুধু দেখাশোনা করি, আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই।”
ভাষাসৈনিকের নাতনি সাবেক এমপি আরমা দত্ত মোবাইল ফোনে বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে সবাই মনে রাখে, বাকি সময় কেউ খবর নেয় না। শুধু আপনিই এ অসময়ে এ বাড়িটির খোঁজখবর নিলেন, আসলে বাড়িটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি হলেও সংরক্ষণে সরকারের কোনো যোগাযোগ নেই।”
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জানান, বাড়িটি নিয়ে পরিবার বিক্রয় চুক্তিতে এগিয়েছে। সরকারি অধিগ্রহণ ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।
যে মানুষটি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রাণ দিলেন, তাঁর স্মৃতি আজ নিজ ভূমিতে অবহেলায় ঢাকা। রাষ্ট্র যখন ভাষা দিবসে ফুল দেয়, তখন প্রশ্ন থেকে যায়—ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কি শুধুই ফেব্রুয়ারির মানুষ?
Mily