ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

অলৌকিক গল্প ও ঐতিহ্যের স্মারক শাহী জামে মসজিদ 

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ২৩:২২, ৪ জুলাই ২০২৫

অলৌকিক গল্প ও ঐতিহ্যের স্মারক শাহী জামে মসজিদ 

জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে রহস্যময় মসজিদ। কথিত আছে প্রাচীন এই মসজিদে জ্বীন এসে নামাজ পড়ে। লুকোমুখে এই মসজিদ গায়েবি মসজিদ ও জ্বীনের মসজিদ নামেও পরিচিত।

১৮৭৬  খ্রিষ্টাব্দের ৩১ অক্টোবর বাংলা ১২৮৩ সনের ১৬ই কার্তিক এই অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায় স্মরণ কালেন সর্বনাশী  ঘূর্ণিঝড়। ঝড়ে গাছপালা বিধ্বস্ত হলে জঙ্গলের ভিতরে মসজিদটা স্থানীয়রা দেখতে পায়। 

বলছিলাম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের শাহী জামে মসজিদের কথা। বাকেরগঞ্জ বরগুনা আঞ্চলিক সড়কের উত্তর পাশে ছোট্ট ও নান্দনিক এই শাহী জামে মসজিদটি। 

ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, ইরানি বংশোদ্ভূত আসফ খানের ছেলে শায়েস্তা খান মোগল আমলে বাংলার একজন বিখ্যাত প্রাদেশিক শাসক ছিলেন। মুঘল আমলে শায়েস্তাখার সুবাদার শেখ শফিউল্লাহ মসজিদটি এই অঞ্চলে নির্মাণ করেন। এই উপজেলার  বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বহু প্রাচীন মসজিদ ইসলামিক নিদর্শন। রাজাপুর শাহী জামে মসজিদও তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মসজিদটি অন্যতম প্রাচীন ইসলামিক নিদর্শন। মুঘল আমলের ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদটি নির্মিত হয়েছে ইট, পাথর ও সুরকির ব্যবহারে। সে সময় এই অঞ্চলে জনবসতি না থাকায় ছোট্ট এই মসজিদটি জঙ্গলে ঢেকে যায়। এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে তখন বাঘ বসবাস করত। সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পরে মসজিদটিকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা জঙ্গল পরিষ্কার করে আবার নামাজ পড়া শুরু করেন। তারপরে কেটে যায় বহু বছর। স্থানীয়রা কেউ কেউ বলেন গভীর রাতে এই মসজিদে জ্বিনেরা এসে নামাজ পড়ে। মসজিদের পাশ দিয়ে হেটে গেলে বিভিন্ন রকম শব্দ শোনা যায়। 

ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে সমাদৃত। ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশে এই মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুসলিম শিক্ষা-সংস্কৃতির ভিত রচনা করে এই শাহী মসজিদ। 

প্রাচীন স্থাপনার শৈল্পিক নিদর্শন এই শাহী মসজিদের উপরে সুদৃশ্য তিনটি গম্বুজ এবং চার কোনায় চারটি মিনার রয়েছে। ভিতরে তিনটি মেহরাব আছে। মসজিদের গায়ে অনেকগুলো খিলান আছে। এ ছাড়া বাতাস চলাচলের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে জানালা আছে। বর্তমানে মসজিদটি স্থানীয়দের অর্থায়নে সংস্কার করা হয়েছে। 

প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সমাবেত হন এই মসজিদে। মসজিদটি সরকারিভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।

Jahan

×