ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

বাড়ির নির্ভরযোগ্য সঙ্গী দেশি বিড়াল: উপকারিতা, সতর্কতা ও করণীয়

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা

প্রকাশিত: ০০:২৮, ৫ জুলাই ২০২৫

বাড়ির নির্ভরযোগ্য সঙ্গী দেশি বিড়াল: উপকারিতা, সতর্কতা ও করণীয়

ঘরের নীরব হিরো এবং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী দেশি বিড়ালের রয়েছে অনেক উপকারিতা, কিছু সাবধানতা এবং পোষার জন্য করণীয় দিকনির্দেশনা।

দেশি বিড়াল সহজেই আমাদের আবহাওয়া, পরিবেশ এবং জীবনধারার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। তবে বিড়াল পোষার ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা।

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ কিংবা শহুরে বাড়িতে দেশি বিড়ালের দেখা মেলে। লেজ উঁচু করে হেঁটে বেড়ানো, মাছ-মাংসের গন্ধ পেলে ছুটে আসা কিংবা মানুষের পাশে এসে গা ঘষা এই আচরণে দেশি বিড়াল হয়ে উঠেছে একান্ত পারিবারিক প্রাণী। তুলনায় বিদেশি জাতের চেয়ে কম খরচে পালনযোগ্য, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি।

দেশি বিড়াল পোষার উপকারিতা:

ইঁদুর দমন:
বিড়াল জন্মগতভাবে শিকারি প্রাণী। ঘরে বা রান্নাঘরে ইঁদুরসহ ছোট উপদ্রবকারী প্রাণী দমন করতে বিড়াল অত্যন্ত কার্যকর।

মানসিক প্রশান্তি:
বিড়ালের সঙ্গে খেলা বা তাদের আচরণ দেখা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। একাকিত্ব দূর করতেও এটি সহায়ক।

শিশুদের সঙ্গী:
শিশুরা বিড়ালের সঙ্গে খেলে আনন্দ পায় এবং পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। এতে তাদের মানবিক গুণাবলিও বিকশিত হয়।

পরিচ্ছন্নতাপরায়ণতা শেখায়:
বিড়াল তার শরীর ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখে। এ আচরণ দেখে শিশুরাও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বোঝে।

কম খরচে রক্ষণাবেক্ষণ:
দেশি বিড়াল বিদেশি জাতের মতো অতিরিক্ত যত্ন চায় না। ঘরের স্বাভাবিক খাবার দিয়েই অনেক সময় পালন করা যায়।

কিছু সাবধানতা:

অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্ট:
কিছু মানুষের জন্য বিড়ালের লোম বা ত্বকের জীবাণু থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানির সমস্যা হতে পারে।

টক্সোপ্লাজমোসিস ঝুঁকি:
বিড়ালের মল-মূত্রের মাধ্যমে একটি পরজীবী সংক্রমিত হতে পারে, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য বিপজ্জনক।

আসবাবপত্রের ক্ষতি:
বিড়াল অনেক সময় সোফা, পর্দা বা অন্যান্য আসবাব ঘষে নষ্ট করে। তাদের নখ ধারালো ও স্বভাবজাতভাবে ঘষার প্রবণতা রয়েছে।

খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ:
রান্নাঘর বা খাবার টেবিলে অনধিকার প্রবেশ করে খাবার খেয়ে ফেলতে পারে, যা অনুচিত ও অস্বাস্থ্যকর।

দেশি বিড়াল পুষতে করণীয়:

নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার:
বিড়ালকে প্রতি সপ্তাহে একবার কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো ভালো। পরিষ্কার রাখলে রোগ সংক্রমণও কমে।

ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা:
বিড়াল পোষার আগে প্রাথমিক ভ্যাকসিন, ডিওয়ার্মিং এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রস্রাব-মল ব্যবস্থা:
বিড়ালের মলমূত্র যেন নির্দিষ্ট স্থানে করে, তার জন্য বালির ট্রে বা নির্দিষ্ট স্থান রাখা উচিত। ঘর যেন দুর্গন্ধমুক্ত থাকে।

গর্ভবতী নারীদের সতর্কতা:
গর্ভবতী নারীদের বিড়ালের মল পরিষ্কার না করাই ভালো। টক্সোপ্লাজমোসিস এড়িয়ে চলা জরুরি।

সংখ্যা সীমিত রাখা:
একাধিক বিড়াল না রেখে একটি বা দুটি পালন করা ভালো। অতিরিক্ত বিড়াল ঘরের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বিড়াল শুধু একটি প্রাণী নয়, অনেকের কাছে পরিবারেরই একজন সদস্য। দেশি বিড়াল সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। তবে কিছু সচেতনতা না মানলে এই প্রিয় সঙ্গী থেকেও রোগ-জটিলতা ছড়াতে পারে। তাই ভালোবাসার পাশাপাশি দায়িত্বও পালন করতে হবে সমানভাবে। তাহলেই ছোট্ট প্রাণীটি হয়ে উঠবে ঘরের আনন্দ ও প্রশান্তির এক অনন্য উৎস।

মিমিয়া

×