ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

পর্যটনকেন্দ্রিক শহর কক্সবাজারের আড়ালে গড়ে উঠছে অস্ত্র কারবারিদের গোপন নেটওয়ার্ক

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৯, ৪ জুলাই ২০২৫

পর্যটনকেন্দ্রিক শহর কক্সবাজারের আড়ালে গড়ে উঠছে অস্ত্র কারবারিদের গোপন নেটওয়ার্ক

ছবিঃ সংগৃহীত

পর্যটনকেন্দ্রিক শহর কক্সবাজারের আড়ালে গড়ে উঠছে অস্ত্র কারবারিদের গোপন নেটওয়ার্ক। মাদক, মানবপাচার ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি এখন এ অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ভয়ংকর বাণিজ্য। র‌্যাব-১৫-এর এক অভিযানে ধরা পড়েছে এমনই একটি চক্র। উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল গুলি।

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার (২ জুলাই) রাতে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ কলাতলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানটি পরিচালিত হয় কলাতলির নিউ চিশতিয়া হ্যাচারির সামনে দরিয়ানগর ব্রিজের কাছে।

অভিযানে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬১ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৮টি বিদেশি পিস্তলের গুলি। এছাড়াও তাদের একটি ইজিবাইক, তিনটি মোবাইল ফোন, কিছু নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, এ অভিযান কক্সবাজারে সক্রিয় হয়ে ওঠা অস্ত্র সরবরাহ চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র উন্মোচন করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, বড় মহেশখালীর মাঝার ডেইল এলাকার আনজু মিয়ার ছেলে শাহ আলম, চক্রের প্রধান পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা উখিয়ার জালিয়াপালং মাদার বুনিয়ার বাসিন্দা আয়ুব আলীর ছেলে আব্দুল জলিল, যিনি অটোরিকশাচালকের ছদ্মবেশে অস্ত্র পরিবহন করতেন, এবং বড় মহেশখালীর দেবাঙ্গা পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল লতিফ আদিল ওরফে আদিল্লা, যিনি অস্ত্র হস্তান্তরের সময় সহায়তা করছিলেন।

র‌্যাব-১৫-এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চক্রের মূলহোতা শাহ আলম অজ্ঞাত উৎস থেকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে তিনি বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে জলিলের মাধ্যমে অস্ত্র হাতে পান। অস্ত্র এনে রাখা হতো ইনানী থেকে কলাতলি পর্যন্ত নির্দিষ্ট কিছু গোপন স্থানে। সবশেষে দরিয়ানগর এলাকায় আদিলের সহায়তায় হস্তান্তরের সময় তারা র‌্যাবের ফাঁদে পড়েন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র ও সহিংসতার একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে আইনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অস্ত্র পাচারে জড়িত। র‌্যাব আরও জানায়, তাদের সঙ্গে বৃহৎ কোনো চক্র বা নেটওয়ার্ক যুক্ত থাকতে পারে, যার অনুসন্ধান চলছে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, কক্সবাজারে বিদেশি অস্ত্রের সহজপ্রাপ্তি নতুন করে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সীমান্ত অঞ্চল এবং রাজনৈতিক সহিংসতার পটভূমিতে এই অস্ত্র চক্র উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে।

তাদের ভাষ্য, পর্যটনের আড়ালে অপরাধের এই গোপন সিন্ডিকেট কক্সবাজারের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। সময়মতো অভিযান না হলে এ চক্র আরও গভীরে গেঁথে যাবে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, শুধু মাদক নয়, এখন কক্সবাজার অস্ত্র পাচারের রুট হয়ে উঠেছে। এতে পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

ইমরান

×