
ছবি:সংগৃহীত
মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই-সদর দক্ষিণের ৭ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিদিনই এই অংশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। গত দুই সপ্তাহে এই এলাকায় কমপক্ষে ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন এক প্রবাসীসহ ৪ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন।
মহাসড়কের লালমাই উপজেলার সৈয়দপুর, বাগমারা বাজার (পুরাতন বোর্ড অফিস সংলগ্ন), ফতেহপুর (মডেল মসজিদ সংলগ্ন), জয়নগর বাজার, আলীশ্বর বাজার, শানিচোঁ বাজার, কাঁকসার (কাঁচিকাটা কবরস্থান সংলগ্ন), হরিশ্চর চৌরাস্তা, ফয়েজগঞ্জ (ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন), ভৈষকোপালিয়া (আগমন রেস্টুরেন্টের পথ) এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার রতনপুর ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন ইউটার্ন দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।
হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২ জুলাই সকালে ফয়েজগঞ্জ উত্তর বাজারে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মোটরসাইকেল চালক নাজমুল (৩০)। কুমিল্লামুখী মালবাহী ট্রাকটি হঠাৎ ফিলিং স্টেশনে যেতে ইউটার্ন করলে পেছন থেকে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার বাড়ি উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের জগতপুরে।
এর আগে ৩০ জুন রতনপুর ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন ইউটার্নে ব্যাটারিচালিত মিশুকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ হারান মোটরসাইকেল আরোহী সোহেল ও সাগর। নিহত সোহেল (৩০) লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের সুলতান আহমেদের ছেলে। আর সাগর (১৯) একই গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন মোটরসাইকেল আরোহী হাসান।
এদিকে, ২৩ জুন ফয়েজগঞ্জ দক্ষিণ বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে পেছন থেকে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারান দ্রুতগতির মোটরসাইকেল চালক প্রবাসী জহিরুল ইসলাম (২৭)। তিনি উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের আলীশ্বর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। জানা গেছে, তার স্ত্রী ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা।
এছাড়া, ১ জুলাই সকালে জয়নগর ইউটার্নে একটি দ্রুতগতির প্রাইভেটকার ব্যাটারিচালিত মিশুককে চাপা দেয়। এতে মিশুক ও কারের ৬ যাত্রী আহত হন। একই দিন দুপুরে কাঁকসারে ট্রাক উল্টে একজন গুরুতর আহত হন। ওই দিন বিকেলে সৈয়দপুরে মোটরসাইকেল-মিশুক সংঘর্ষে একজন গুরুতর আহত হন।
গত ২৪ জুন ফয়েজগঞ্জে দুপুরে অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও মিশুকের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ৪ জন আহত হন।
লালমাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের বাগমারা, আলীশ্বর, শানিচোঁ, কাঁকসার ও ফয়েজগঞ্জ অংশে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ অসমাপ্ত থাকার কারণেই প্রতিনিয়ত যানজট ও দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে পথচারীদের। গত কিছুদিনে দুর্ঘটনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এই সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন পথচারীরা। তাই দ্রুততম সময়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের অবশিষ্ট অংশ দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার দাবি জানাই।
লাকসাম হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আদেল আকবর বলেন, গত দুই সপ্তাহে মহাসড়কের লালমাই-সদর দক্ষিণে ঘটে যাওয়া ১৫টি দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ইউটার্ন সংলগ্নে ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই প্রবাসীসহ ৪ জন, আহত হয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন। তিনটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মূলত চার লেনের দ্রুতগতির গাড়ি যখন দুই লেনে উঠে গতি কমাতে ব্যর্থ হয় তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।
লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিমাদ্রী খীসা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। নিহত-আহতদের সংখ্যা বাড়ছে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, হেলমেট ব্যবহার না করা ও নিয়ম না মেনে ইউটার্ন করায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৪ জন মোটরসাইকেল চালককে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
মারিয়া