ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

অতিরিক্ত লবণ: উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, আবার কম খেলেও হতে পারে প্রাণঘাতী বিপদ

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:০০, ৫ জুলাই ২০২৫

অতিরিক্ত লবণ: উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, আবার কম খেলেও হতে পারে প্রাণঘাতী বিপদ

ছবি: সংগৃহীত

লবণ ছাড়া খাবারের স্বাদ কল্পনা করা কঠিন। তবে এই লবণই হতে পারে জীবনের জন্য একদিকে অপরিহার্য, অন্যদিকে হুমকিও। যুক্তরাষ্ট্রের রটগার্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল ব্রেসলিন জানান, লবণ মানবদেহের নিউরন, মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, পেশি, ত্বক এবং হাড়ের কোষসমূহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, “লবণ আমাদের মনে ও শরীরে শক্তি যোগায়। এতে থাকা সোডিয়াম লালায় দ্রবীভূত হয়ে স্বাদ কোষে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে, যা আমাদের চিন্তা ও অনুভূতিতে প্রভাব ফেলে।”

তবে এই প্রয়োজনীয় উপাদান অতিরিক্ত হলে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণ করা উচিত যাতে ২ গ্রাম সোডিয়াম শরীরে প্রবেশ করে। বাস্তবে, বিশ্বব্যাপী একজন মানুষ গড়ে ১১ গ্রাম লবণ গ্রহণ করেন, যা প্রায় দ্বিগুণ।

কম লবণও বিপজ্জনক
অত্যধিক লবণ যেমন ক্ষতিকর, তেমনি লবণের অভাবও প্রাণঘাতী হতে পারে। শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি হলে হাইপোনাট্রেমিয়া দেখা দিতে পারে, যার ফলে বিভ্রান্তি, বমি, খিঁচুনি এমনকি কোমাতেও চলে যেতে পারেন কেউ কেউ।

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি
অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লেয়ার কলিন্স বলেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

লবণ শুধু স্বাদ নয়, চেহারা ও ঘ্রাণেও প্রভাব ফেলে
লবণ কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বরং তিক্ততা কমায়, খাবারের রঙ উজ্জ্বল করে এবং ঘ্রাণও উন্নত করে। যেমন, পাউরুটি তৈরিতে লবণ না থাকলে তা ফ্যাকাসে ও অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ে।

সংস্কৃতি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার লবণ খাওয়ার হার বাড়ায়
কাজাখস্তানে একজন ব্যক্তি গড়ে প্রতিদিন ১৭ গ্রাম লবণ গ্রহণ করেন। এখানকার শীতপ্রধান আবহাওয়া ও ঐতিহাসিক খাদ্যসংস্কৃতির কারণে লবণ সংরক্ষণ ও স্বাদ দুটো উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়। এ কারণে মাংস, দুধসহ বহু খাবারেই প্রচুর লবণ ব্যবহৃত হয়।

কীভাবে লবণ খাওয়া কমাবেন?
খাবারে লবণ কমানো সহজ নয়। তবে ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলা এবং কম সোডিয়ামযুক্ত রুটি বা পাস্তা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খাবারের ডায়েরি রাখা বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেও খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

কাজাখস্তানের বাসিন্দা মারিয়াম জানান, তার মেয়ের স্বাস্থ্য সমস্যা ধরা পড়ার পর থেকে পরিবার লবণ খাওয়া কমিয়েছে। যদিও শুরুতে খাবার অচেনা মনে হয়েছে, সময়ের সঙ্গে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

লবণ আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে মাত্রার অতিরিক্ত হলেই তা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই চিকিৎসকরা পরিমিত লবণ গ্রহণ এবং সচেতন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সূত্র: BBC

নোভা

×