
ছবি: সংগৃহীত
সুস্থতা ও ভালো থাকার জন্য মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি। মানসিক ব্যায়াম আর ভালো ঘুম যেমন সাহায্য করে, তেমনি আপনার খাদ্যাভ্যাসেও রয়েছে বড় প্রভাব—এখনও, ভবিষ্যতেও। মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য কোনো যাদুকরী ওষুধ নেই, তবে কিছু পুষ্টি উপাদান সত্যিকার অর্থেই তার খুব কাছাকাছি। স্মৃতিশক্তি বাড়ানো, মনোযোগ বৃদ্ধি, বয়সভিত্তিক স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন দিক থেকে এই পুষ্টিগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
এখানে রয়েছে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় ৬টি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান ও তাদের প্রাকৃতিক উৎস—
১. ওমেগা-৩
ওমেগা-৩ হলো এক ধরনের উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড, যা সব বয়সেই মস্তিষ্কের বিকাশ ও কার্যকারিতা উন্নত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শেখা, স্মৃতি, মস্তিষ্কের সামগ্রিক সুস্থতা ও রক্ত প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর।
বিশেষ করে ইপিএ (EPA) ও ডিএইচএ (DHA) নামের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষের পর্দা গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এর প্রাকৃতিক উৎস:
-
চর্বিযুক্ত মাছ (স্যালমন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল)
-
চিয়া বীজ
-
ফ্ল্যাক্সসিড (তিলের মতো দেখতে বীজ)
-
আখরোট
-
অ্যালগাল অয়েল (উদ্ভিদ-ভিত্তিক ডিএইচএ সাপ্লিমেন্ট)
২. ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12)
ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান, যা স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং লাল রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।
এটি শরীরের হোমোসিস্টেইন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিডের মাত্রাও কমায়, যা বেশি হলে ক্ষতিকর হতে পারে।
এর প্রাকৃতিক উৎস:
-
ডিম
-
দুগ্ধজাত খাবার (দুধ, দই, পনির)
-
মাংস ও হাঁস-মুরগির মাংস
-
ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল (বিশেষ করে যারা নিরামিষভোজী তাদের জন্য)
৩. ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি, যা 'সূর্যের ভিটামিন' নামে পরিচিত, মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শুধু হাড়ের জন্যই নয়, এটি নিউরোপ্রটেকটিভ হরমোন হিসেবেও কাজ করে।
এটি প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ডিমেনশিয়া, বিষণ্ণতা, অটিজম ও সিজোফ্রেনিয়ার মতো নানা সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
এর প্রাকৃতিক উৎস:
-
সূর্যের আলো (শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়)
-
চর্বিযুক্ত মাছ (টুনা, ট্রাউট)
-
ফোর্টিফায়েড দুধ
-
ডিমের কুসুম
-
মাশরুম
৪. ম্যাগনেশিয়াম
ম্যাগনেশিয়াম শরীরের ৩০০টির বেশি এনজাইমের কাজের জন্য অপরিহার্য।
এটি মস্তিষ্কের সংকেত নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ম্যাগনেশিয়াম এনএমডিএ রিসেপ্টর পরিচালনা করে, যা শেখা, স্মৃতি এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে ম্যাগনেশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এর প্রাকৃতিক উৎস:
-
শাক-সবজি (স্পিনাচ, কেল)
-
বাদাম ও বীজ (কুমড়োর বীজ, বাদাম)
-
পূর্ণ শস্য
-
ডার্ক চকলেট
৫. ভিটামিন ই
ভিটামিন ই হলো একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
এটি ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে, যা বয়সভিত্তিক স্মৃতিভ্রংশ ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
এর প্রাকৃতিক উৎস:
-
বাদাম (বিশেষ করে আমন্ড)
-
সূর্যমুখীর বীজ
-
অ্যাভোকাডো
-
শাক-সবজি (স্পিনাচ, ব্রকলি)
-
উদ্ভিজ্জ তেল (সূর্যমুখী তেল, উইট জার্ম তেল)
৬. কোয়ারসেটিন
কোয়ারসেটিন হলো একটি ফ্ল্যাভোনয়েড, যা বিভিন্ন উদ্ভিদে পাওয়া যায়।
এটি মস্তিষ্কের কোষের শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়।
এছাড়াও, কোয়ারসেটিন নিউরোজেনেসিস (নতুন স্নায়ু কোষ তৈরি) বাড়াতে সাহায্য করে ও আলঝেইমারস ও পারকিনসনের মতো স্নায়ুজনিত রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
এর প্রাকৃতিক উৎস:
-
আপেল
-
বেরি জাতীয় ফল (বিশেষ করে ব্লুবেরি)
-
পেঁয়াজ (লাল ও হলুদ)
-
কেল
-
ক্যাপারস
-
গ্রিন টি (সবুজ চা)
মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে শুধুমাত্র ঘুম বা ব্যায়ামই যথেষ্ট নয়। পুষ্টিকর খাবারই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর পথ।
এই ছয়টি পুষ্টি উপাদান নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখুন, মস্তিষ্কও থাকবে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম।
আবির