
পটুয়াখালীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। জেলা সদরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমক্ষেক্সে কম-বেশি রোগী থাকলেও মির্জাগঞ্জে সনাক্তের হার সব চেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে সরকারি হিসেবে সনাক্তের সংখ্যা ৭’শ ছাড়ালেও তার মধ্যে ৩৭৫ জনই মির্জাগঞ্জে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারনে সদর উপজেলার ধরান্দী গ্রামের এক এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী এক পেপার পরীক্ষা দিয়ে আর অংশ নিতে পারেনি। তার পরিবার চাচ্ছে তিন বিষয় পরীক্ষা দিতে না পরলেও এখন অনেকটা সুস্থ্য হওয়ায় বাকি পরীক্ষাগুলো দেয়াতে। আর যে তিন বিয়য়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিশেষ বিবেচনায় তার পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক এমনটাই আকুতি দরিদ্র পরিবারের বাব-মার। এদিকে, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেও মধ্যে বরগুনা ও ঢাকা থেকে আসারাও রয়েছে। কর্মসূত্রে দুরে থাকা এ মানুষগুলো অসুস্থ হওয়ার পর এলাকায় স্বজনদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কথা স্বীকার করলেও এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করলেন সিভিল সার্জন ডা. খালেদুর রহমান মিয়া। ভৌগলিক নৈকট্যের কারনে বরগুনার ডেঙ্গুর প্রভাব মির্জাগঞ্জ উপজেলায় বেশি বলেও মনে করেন তিনি।
কলাগাছিয়া এস.এম. সেকান্দার আলী ডিগ্রী কলেজের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী দিপ্ত চন্দ্র রায়ের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ধরান্দি গ্রামে। জ¦র নিয়েই ২৬ জুন এইএসসির শুরুর দিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দেন। দুই দিন পর দ্বিতীয় দিনে বাংলা দ্বিতীয় প্রত্র পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার পথেই তীব্র জ¦রের অসুস্থতার কারনে রাস্তায় পড়ে যান। পরীক্ষা করে ধরা পড়ে ডেঙ্গু পজেটিভ সেই থেকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ জুলাই পর্যন্ত। বর্তমানে অনেকটা সুস্থ্য হওয়ায় দিপ্ত ও তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা বাকি পরীক্ষাগুলোয় অংশ নেয়া। সাথে যে তিনটি পরীক্ষা দিতে পারেনি সেগুলো বিশেষ বিবেচনায় অংশ নেয়ার সুযোগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রালয়ের প্রতি দাবি জানিয়েছে তার বাবা শ্যামল চন্দ্র রায় ও মা কল্পনা রায়।
বরগুনায় ব্রাকে চাকুরি করেন পটুয়াখালী পৌরসভার টাউন জৈনকাঠী এলাকার মো. সোহেল। গত শনিবার কর্মস্থলেই ডেঙ্গু সনাক্ত হন তিনি। এর পরে চলে আসেন পটুয়াখালীতে। চিকিৎসাধীন আছেন এখানকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
একই ভাবে কর্মসূত্রে মুন্সিগঞ্জে থাকেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড়বিঘাই এলাকার মো. আলামিন। তিনি সেখানে একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি মসজিদে ইমামতিও করেন। গত রোববার তার শরীরে জ¦র আসলে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হন। ওখানে কেউ না থাকায় চলে আসেন এলাকায়। বর্তমানে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের চেয়ে বাড়তির বিষয়টি স্বীকার করে তা এখনও সহনীয় পর্যায়ে থাকার দাবি করেন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মো. খালেদুর রহমান মিয়া। চিকিৎসায় নেয়া বিভিন্ন পদেক্ষেপের পাশাপাশি মির্জাগঞ্জে রোগীর সংখ্যা বেশির কারন হিসেবে বরগুনার সাথে ভৌগলিক নৈকট্যকে উল্লেখ করেন। তবে সেখানে লার্ভা আছে কিনা এখনও সার্ভে হয়নি বলে জানান।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব মতে, চলতি মৌসমে এর্পন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে-৭৩৮ জন। এর মধ্যে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই শনাক্ত হয়েছে-৩৮১ জন। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে-১৯৩ জন।
তবে এটি শুধু সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসাদের রেকর্ড। এর বাইরে যারা প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে সনাক্ত হয়ে বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের সংখ্যা এই ডাটায় আসছেনা।
শনিবার (৫ জুলাই) নতুন ১৬ জনসহ ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শিহাব