
ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ায় ‘চাইনিজ ব্লেসিং স্ক্যাম’-এর অভিযোগে দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই প্রতারণায় এক ৭৭ বছর বয়সী এশীয় বংশোদ্ভূত নারীর কাছ থেকে প্রায় ১.৩ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৪ লাখ টাকা) মূল্যের নগদ অর্থ ও গয়না হাতিয়ে নেওয়া হয়। সিডনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক ৬৩ বছর বয়সী নারীকে এবং পরদিন ব্রিসবেন বিমানবন্দর থেকে তার ৬৩ বছর বয়সী সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। সে চীনে পালানোর চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই স্ক্যামের ধরন বহু পুরনো। প্রতারকরা সাধারণত বয়স্ক এশীয় নারীদের টার্গেট করে। তারা নিজেদের “আধ্যাত্মিক গুরু” বা “ওঝা” হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের বোঝায় যে তাদের উপর অশুভ প্রভাব আছে। এই প্রভাব কাটাতে হলে টাকা ও গয়না একটি ব্যাগে ভরে বিশেষ “আশীর্বাদ” করতে হবে, এবং বলা হয় এই ব্যাগ কয়েক সপ্তাহ বা মাস খুলা যাবে না। পরে ব্যাগ খুলে দেখা যায়, তাতে কিছুই নেই।
নিউ সাউথ ওয়েলস (NSW) পুলিশ জানায়, এই স্ক্যামের তদন্তে গঠিত ‘স্ট্রাইক ফোর্স সেন্টিনেল’ ইতোমধ্যে ৮০টি অভিযোগ পেয়েছে এবং আনুমানিক মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। তদন্তকারীরা বলছেন, অন্তত ৫০ জন এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত এবং ২৫ জনের নাম শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং আরও ২৫ জনকে সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত করা গেছে।
ডিটেকটিভ সুপারিনটেনডেন্ট গাই ম্যাগি জানান, “এই প্রতারকরা বয়স্ক ও একাকী নারীদের হায়েনার মতো ঘিরে ফেলে। তারা ‘রিচ্যুয়াল’ বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ছলে সরল মানুষদের সর্বস্ব লুটে নেয়।” তিনি বলেন, অনেক ভুক্তভোগী লজ্জায় বিষয়টি প্রকাশ করেন না, তাই প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণও হতে পারে।
একই ধরনের ঘটনা গত বছর নিউজিল্যান্ডেও ঘটে, যেখানে তিন চীনা নাগরিককে একই কায়দায় প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তারা ৩০,০০০ নিউজিল্যান্ড ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ও গয়না লুট করেছিল।
এদিকে NSW পুলিশ জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, “অপরিচিত কেউ যদি ভেষজ চিকিৎসকের খোঁজ চায় বা আপনার বাড়িতে আধ্যাত্মিক কাজ করার প্রস্তাব দেয়, তাকে বিশ্বাস করবেন না। কখনও কেউ আপনার গয়না বা অর্থ ‘আশীর্বাদ’ করার নাম করে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে জানান।”
এই প্রতারণার মূলমন্ত্র হচ্ছে বিশ্বাস ও লজ্জাকে কাজে লাগিয়ে সহজ-সরল মানুষদের ফাঁদে ফেলা। সচেতনতা এবং প্রতিবাদই এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
মুমু ২