
ছবি: সংগৃহীত
আপনি হয়তো জানেন, চিনি হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার অন্যতম প্রিয় খাদ্য। অথচ চিনি দিয়ে তৈরি মধুতেই তারা প্রায় বাঁচতেই পারে না! এই অবিশ্বাস্য টিকে থাকার গুণটি আসলে মধুর অনন্য রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।
মধু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা সিল করা অবস্থায় শতাব্দীর পর শতাব্দীও সংরক্ষণযোগ্য থাকে। একে ঘরের কোণে ফেলে রাখলেও তা খাওয়ার উপযোগী থেকে যায়—শুধু জমাট বাঁধে, কিন্তু নষ্ট হয় না।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, মধুর এই অনন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার পেছনে কী বিজ্ঞান লুকিয়ে আছে।
মধু তৈরি হয় ফুলের মধুরস থেকে। মৌমাছিরা সেই তরল মধুরসকে হাইভে আনার পথে পানির পরিমাণ কমিয়ে ফেলে, সেই সঙ্গে এনজাইম দিয়ে অ্যাসিডিক করে তোলে ও জটিল চিনি ভেঙে সরল চিনিতে পরিণত করে।
এরপর তারা পাখার মতো ডানা ঝাপটে সেই তরলের আরও জলীয় অংশ উড়িয়ে দেয়। এর ফলে ৭০-৮০% জলযুক্ত তরল রূপান্তরিত হয় মাত্র ১৫-১৮% জলবিশিষ্ট মধুতে। এত কম পানিযুক্ত পদার্থে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ
- অত্যধিক চিনি: চিনি ও পানির অনুপাত এতটাই বেশি যে ব্যাকটেরিয়ারা পানির অভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।
- অ্যাসিডিক pH: মধুর প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার বিকাশকে বাধা দেয়।
- সিল করা পরিবেশ: অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
একে বলা হয় "low water activity", যা প্রসেস করা অনেক খাবার সংরক্ষণের একটি কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। শুধু চিনি নয়, লবণ দিয়েও অনেক খাবারে একই কৌশল প্রয়োগ হয়।
একবার বোতল খোলার পর যদি আপনি সেখানে ভেজা বা চোষা চামচ ডুবিয়ে দেন, তাহলে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়ে ও পচনের সম্ভাবনা বাড়ে।
তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে মধু শত বছরেও নষ্ট হয় না—আর যদি পানির সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে মিশিয়ে দেন এবং কিছু ইস্ট যুক্ত করেন, তাহলে তৈরি হয় "মীড", অর্থাৎ প্রাচীনতম অ্যালকোহলিক পানীয়ের একটি।
মুমু ২