
ছবি: সংগৃহীত
রাগ একটি স্বাভাবিক মানবিক অনুভূতি হলেও, এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, স্বাস্থ্য এবং কর্মজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু কার্যকর কৌশল নিচে দেওয়া হলো:
১. গভীর শ্বাস নিন এবং ১০ পর্যন্ত গুনুন: রাগের মুহূর্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া এড়াতে এই পদ্ধতিটি খুব কার্যকর। গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ১০ পর্যন্ত গুনুন। প্রয়োজনে ২০ পর্যন্তও গুনতে পারেন। এটি আপনার হার্টবিট স্বাভাবিক করবে এবং আপনাকে শান্ত হতে সাহায্য করবে।
২. পরিস্থিতি থেকে সাময়িক বিরতি নিন: যদি সম্ভব হয়, যে পরিস্থিতি আপনাকে রাগিয়ে তুলছে, সেখান থেকে কিছুক্ষণের জন্য সরে যান। একটি ভিন্ন ঘরে যান, বাইরে হাঁটতে যান বা শান্ত কোনো স্থানে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটান। পরিবেশ পরিবর্তন আপনার মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে।
৩. শারীরিক কার্যকলাপ করুন: ব্যায়াম, হাঁটা, জগিং, বা যেকোনো শারীরিক কার্যকলাপ রাগ কমানোর একটি চমৎকার উপায়। শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে স্ট্রেস হরমোন কমে এবং এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা মেজাজ উন্নত করে।
৪. নিজের রাগ প্রকাশের একটি স্বাস্থ্যকর পথ খুঁজুন: রাগের অনুভূতিগুলো চেপে রাখা উচিত নয়, বরং স্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রকাশ করা উচিত। আপনার রাগ সম্পর্কে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা থেরাপিস্টের সাথে কথা বলতে পারেন। জার্নালে লিখে রাখা বা ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজও রাগ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
৫. নিজের চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করুন: রাগের সময় প্রায়শই আমরা অযৌক্তিক বা বাড়াবাড়ি রকমের চিন্তা করি। পরিস্থিতিটি বাস্তবসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুন। কী কারণে আপনি রেগে যাচ্ছেন? পরিস্থিতিটা কি সত্যিই এত গুরুতর? আপনার প্রতিক্রিয়া কি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিচ্ছে?
৬. সমস্যা সমাধানের উপর মনোযোগ দিন: যদি আপনার রাগ কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার কারণে হয়, তাহলে সেই সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগ দিন। গঠনমূলক উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন, অভিযোগ বা দোষারোপ না করে।
৭. আরামদায়ক কৌশল অবলম্বন করুন: ধ্যান, যোগব্যায়াম, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো, গান শোনা বা পছন্দের কোনো কাজ করা আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন এবং নিজেকে রিচার্জ করার সুযোগ দিন।
৮. যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করুন: রাগের মুহূর্তে চিৎকার বা আক্রমণাত্মক আচরণ না করে শান্তভাবে আপনার অনুভূতি এবং চাহিদা প্রকাশ করতে শিখুন। "আমি" বাক্য ব্যবহার করুন (যেমন: "আমার মনে হচ্ছে...")। এটি ভুল বোঝাবুঝি কমিয়ে আনে এবং অন্যের প্রতিক্রিয়াও ইতিবাচক হয়।
৯. ক্ষমা করতে শিখুন: অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা বা মানুষের প্রতি রাগ পুষে রাখলে তা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। ক্ষমা করা আপনাকে রাগের বোঝা থেকে মুক্ত করে।
১০. পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ঘুমের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেজাজ খিটখিটে করে তুলতে পারে এবং রাগ বাড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
১১. চিকিৎসকের সাহায্য নিন: যদি আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, ঘন ঘন হয় এবং আপনার সম্পর্ক বা দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে একজন মনোবিজ্ঞানী বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাহায্য নেওয়া উচিত। তারা আপনাকে রাগ ব্যবস্থাপনার কৌশল শিখতে এবং এর মূল কারণ খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারেন।
মনে রাখবেন, রাগ নিয়ন্ত্রণ একটি শেখার প্রক্রিয়া এবং এর জন্য ধৈর্য ও অনুশীলন প্রয়োজন।
সাব্বির