
ছবি: সংগৃহীত
সকালে ঘুম থেকে উঠে পেট ফুলে থাকা কিংবা গ্যাসের সমস্যা খুব সাধারণ ঘটনা হলেও এটি অবহেলা করা উচিত নয়। এমন অবস্থা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। পেট টাইট লাগা, পেটের মধ্যে চাপ বা গুঞ্জনধ্বনি — এগুলো আপনার অন্ত্রের পক্ষ থেকে বার্তা।
অবাক করার বিষয় হলো, এমন সমস্যা শুধু রাতের খাবারের কারণে নয়। বরং প্রতিদিনকার কিছু ছোট ছোট অভ্যাস, যেগুলো আমরা লক্ষ্যই করি না, সেটাই হতে পারে ভোরবেলার গ্যাস ও পেট ফোলার মূল কারণ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৭টি সাধারণ অভ্যাস যা আপনার ভোরবেলার পেটের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে—
১. রাতে দেরিতে খাওয়া
ঘুমানোর আগে ভারী, মশলাদার বা বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে তা রাতে ভালোভাবে হজম হয় না। ফলে তা অন্ত্রে জমে গ্যাস তৈরি করে।
সমাধান: ঘুমানোর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া শেষ করুন। যদি খিদে লাগে, তবে কলা বা কিছু বাদামের মতো হালকা খাবার খান।
২. অতিরিক্ত বাতাস গেলা (হ্যাঁ, সত্যি!)
চিবানোর সময় দ্রুত খাওয়া, চুইংগাম খাওয়া বা কার্বনেটেড পানীয় খেলে বাতাস গলায় যায় যা পরবর্তীতে পেটে জমে গ্যাস সৃষ্টি করে।
সমাধান: ধীরে খাওয়া, স্ট্র বাদ দেওয়া ও সন্ধ্যার পর ফিজি ড্রিংক না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. খারাপ ঘুমের ভঙ্গি
ঘুমানোর সময় পিঠের উপর শোয়া হজমে সমস্যা করে। এতে গ্যাস জমে এবং কখনও কখনও অ্যাসিড রিফ্লাক্সও হতে পারে।
সমাধান: বাম কাত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন — এতে হজমে সহায়তা হয় এবং গ্যাস সহজে বের হতে পারে।
৪. পানি কম খাওয়া
যথেষ্ট পানি না খেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সম্ভাবনা বাড়ে।
সমাধান: দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। সকালে উষ্ণ পানি বা লেবু পানি পান করা ভালো।
৫. অতিরিক্ত ফাইবার খাওয়া
হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে ফল, সবজি, ডাল বা দানা জাতীয় খাবার খেলে অন্ত্রে ফারমেন্টেশন বাড়ে এবং গ্যাস সৃষ্টি হয়।
সমাধান: ধীরে ধীরে ফাইবার গ্রহণ বাড়ান ও প্রচুর পানি পান করুন। রাতে কাঁচা সালাদ বা স্মুদি বাদ দিয়ে হালকা, রান্না করা সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৬. সকালে টয়লেট বাদ দেওয়া
ঘুম থেকে উঠে মলত্যাগ না করলে অন্ত্রে বর্জ্য জমে গ্যাস ও ফোলাভাব বাড়ে।
সমাধান: সকালে একটু সময় নিয়ে নিয়মিত টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। উষ্ণ পানি পান করে টয়লেটে বসে থাকুন, প্রয়োজনে কিছু না হলেও।
৭. মানসিক চাপ
চাপ বা দুশ্চিন্তা হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এতে অন্ত্র বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং গ্যাস, ফোলাভাব বাড়ে।
সমাধান: প্রতিদিন ছোট ছোট চাপমুক্তির চর্চা করুন — হাঁটাহাঁটি, শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম, ফোন থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি। যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনও সহায়ক।
তাহলে, সকালে গ্যাস হওয়া কি স্বাভাবিক?
সকালবেলা হালকা গ্যাস হওয়া স্বাভাবিক। তবে যদি তা অতিরিক্ত, ব্যথাযুক্ত বা সারাদিন পেট ফোলা অবস্থায় থাকে, তবে খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন অভ্যাস খেয়াল করুন বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আমাদের অন্ত্রকে অনেক সময় 'দ্বিতীয় মস্তিষ্ক' বলা হয়। এটি কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় আমাদের শরীরের অবস্থার বার্তা দেয়। তাই নিয়মিত অভ্যাসগুলো খেয়াল রাখা ও সামান্য পরিবর্তন করাই হতে পারে প্রতিকার।
সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া
নোভা