
ছবি: সংগৃহীত
টানা ১৮ বছর ধরে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করা এক দম্পতি অবশেষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর মাধ্যমে সফলভাবে গর্ভধারণ করেছেন। সন্তান নেওয়ার জন্য এই দম্পতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বারবার ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা পরীক্ষাগারভিত্তিক নিষিক্তকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করেন, কিন্তু কোনোবারই সফল হননি।
সমস্যার মূল কারণ ছিল অ্যাজোস্পার্মিয়া নামের বিরল একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে পুরুষের শুক্রাণুতে কোনো কার্যকর বা গণনাযোগ্য শুক্রাণু থাকে না। সাধারণ সুস্থ শুক্রাণুতে প্রতি মিলিলিটারে লাখ লাখ শুক্রাণু থাকার কথা থাকলেও, তাদের ক্ষেত্রে তা ছিল না।
শেষমেশ সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, এই দম্পতি কোলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ফার্টিলিটি সেন্টার (CUFC)-এ আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁরা STAR (Sperm Tracking and Recovery) নামের এক নতুন পদ্ধতির সাহায্য নেন, যেখানে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণুর মধ্যে লুকানো শুক্রাণু খুঁজে বের করা হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই অবশেষে তাঁদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার সফলতা আসে।
ফার্টিলিটি সেন্টারের গবেষকরা এআই-চালিত পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করে লুকানো শুক্রাণু শনাক্ত করতে সক্ষম হন। পরবর্তী ধাপে ওই শুক্রাণু সংগ্রহ করে আইভিএফ পদ্ধতিতে স্ত্রীর ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করা হয় এবং প্রথমবারের মতো এই STAR পদ্ধতিতে গর্ভধারণে সফলতা আসে।
গর্ভবতী নারীটি বলেন, "আমি গর্ভবতী হয়েছি—এই কথা বিশ্বাস করতেই আমার দু’দিন লেগে গেছে। আজও সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবি, এটা কি সত্যি? স্ক্যান না দেখলে এখনও মনে হয়, এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন!"
এই STAR পদ্ধতি তৈরি হয়েছে পাঁচ বছর ধরে পরিচালিত এক গবেষণার মাধ্যমে, যার নেতৃত্ব দেন CUFC-এর পরিচালক ড. জেভ উইলিয়ামস। এই গবেষণা দল নিজেরাও ফলাফল দেখে বিস্মিত হয়ে যান।
ড. উইলিয়ামস জানান, "একজন রোগী নমুনা দিয়েছিলেন, যেখানে দক্ষ টেকনিশিয়ানরা দুই দিন ধরে খুঁজেও কোনো শুক্রাণু পাননি। পরে আমরা সেটি STAR সিস্টেমে দেই। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে এআই সেখানে ৪৪টি শুক্রাণু খুঁজে পায়। তখনই বুঝতে পারি, 'এই পদ্ধতি পুরো খেলাই বদলে দেবে! এটা রোগীদের জন্য বিশাল পার্থক্য তৈরি করবে।'"
এই পদ্ধতিতে শুক্রাণুর নমুনা একটি বিশেষ ডিজাইনের চিপে রেখে মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখা হয়। এরপর STAR সিস্টেম উচ্চক্ষমতার ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুরো নমুনা স্ক্যান করে এবং এক ঘণ্টারও কম সময়ে ৮০ লাখেরও বেশি ছবি ধারণ করে। এরপর প্রশিক্ষিত এআই সিস্টেম সেই ছবি বিশ্লেষণ করে সহজেই শুক্রাণু শনাক্ত করে ফেলে।
আবির