
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় চালানো গণহত্যার জন্য সরাসরি ইসরাইলকে দায়ী করেছেন ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে তিনি জানান, গাজা ধ্বংসে ইসরাইল প্রায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে, যা হিরোশিমায় ফেলা বোমার তুলনায় ছয়গুণ বেশি শক্তিশালী।
তিনি বলেন, আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বর্বর এই হামলায় ইসরাইলকে সজ্জিত করেছে অস্ত্র কোম্পানিগুলো, যারা এর মাধ্যমে প্রায় রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে।
আলবানিজের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ২০ মাসে গাজায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহের ফলে ইসরাইল-সমর্থিত অস্ত্র কোম্পানিগুলোর লাভ তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সময়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং এক লাখ ৩৪ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “একজন মানুষ সমৃদ্ধ হয়েছে, আর একজন মানুষ মুছে গেছে।”
তিনি মার্কিন-ইসরাইলি ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’-কে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি মূলত একটি মৃত্যুফাঁদ, যা গাজার অবরুদ্ধ, ক্ষুধার্ত ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে হত্যা বা বিতাড়িত করতে তৈরি করা হয়েছে।
আলবানিজ অভিযোগ করেন, ইসরাইল গাজাকে নতুন অস্ত্র, নজরদারি প্রযুক্তি, প্রাণঘাতী ড্রোন ও রাডার সিস্টেম পরীক্ষার আদর্শ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, গাজার প্রতিরক্ষাহীনতা ইসরাইলি সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তত ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান—অস্ত্র প্রস্তুতকারক, ব্যাংক, প্রযুক্তি কোম্পানি, তেল ও গ্যাস জায়ান্ট এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠান—ইসরাইলি দখলদারিত্বের অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
আলবানিজ বলেন, “আজকের গণহত্যা এতই দৃশ্যমান, এতই সরাসরি সম্প্রচারিত যে, এটিকে না-জানা বা আদর্শগত বিভ্রান্তি বলে ব্যাখ্যা করা আর চলে না।”জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন:
*ইসরাইলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা* আরোপ করতে হবে।
*সব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক* স্থগিত করতে হবে।
*আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত* করতে হবে।
তিনি বলেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে*।
আলবানিজ তাঁর বক্তব্য শেষ করেন নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে:
“ট্রেড ইউনিয়ন, আইনজীবী, সামাজিক সংগঠন, সাধারণ নাগরিক ও সরকারগুলোকে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা ও জবাবদিহিতার জন্য ঐক্যবদ্ধ চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এরপর কী হবে, তা নির্ধারণ করবে আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপ।”
ছামিয়া