ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের

প্রকাশিত: ১৭:০১, ৪ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজ। তার দাবি, ইসরায়েল বর্তমানে ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ পরিচালনা করছে এবং এ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হলে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অস্ত্র সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য দায়ী। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবস্থা এখন ভয়াবহ।’

আলবানিজ জাতিসংঘে তাঁর উপস্থাপিত প্রতিবেদনে জানান, ইসরায়েলের দমন-পীড়ন ও সহিংসতায় সহায়তাকারী বেশ কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ ইসরায়েলি অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে সাহায্য করছে, কেউ দিচ্ছে নজরদারি প্রযুক্তি, আবার কেউ সরাসরি ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও নিপীড়নে ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনায় এক ধরনের ‘যন্ত্র’ হিসেবে কাজ করছে। তাদের কার্যকলাপের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি। লক্ষাধিক মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শহর, গ্রাম, হাসপাতাল ও স্কুলগুলোও বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ অঞ্চল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আলবানিজ বলেন, ‘এক জাতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, আরেক জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। স্পষ্টতই, কারও কারও জন্য গণহত্যাও লাভজনক হয়ে উঠেছে।’ তিনি জানান, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারমূল্য বেড়েছে অন্তত ২০০ শতাংশ। বাজারে যুক্ত হয়েছে ২২ হাজার কোটি ডলারের বেশি মূলধন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক-শিল্প খাতই দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। দখলদারি ও সামরিক অভিযানগুলো তাদের জন্য অস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৮৫ হাজার টনেরও বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে, যা হিরোশিমায় ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমার তুলনায় ছয় গুণ বেশি শক্তিশালী।

অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে বলে জানান আলবানিজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা যখন গাজায় রক্তপাত থামাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান এই সংকট থেকে সরাসরি লাভবান হচ্ছে।’

প্রতিবেদনে ইসরায়েলের দমন-পীড়নে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

আলবানিজের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে লাভবান হয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। নয়তো বিশ্ব গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূল্যবোধ প্রশ্নের মুখে পড়বে।’

 

সূত্র: আল জাজিরা।

রাকিব

×