ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলি সেনাদের নির্মমতা: পরিবারের সামনে বাবা-ভাইকে হত্যা, বাকিদের কটূক্তি ও লাঞ্ছনা

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:২৪, ৪ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলি সেনাদের নির্মমতা: পরিবারের সামনে বাবা-ভাইকে হত্যা, বাকিদের কটূক্তি ও লাঞ্ছনা

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের সময় নিজের বাবাকে গুলি করে হত্যা হতে দেখেছেন হাদিল সালেহ। তাঁর ভাইকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে পরিবারকে কটূক্তি ও লাঞ্ছনা করে তাড়িয়ে দেয় সেনারা।

ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে (রমজান মাসে) যখন হাদিলের নয় সদস্যের পরিবার ক্ষুধার্ত ও ভীত অবস্থায় গাজা শহরের একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিল। টানা বোমা বর্ষণে কাঁপছিল পুরো এলাকা।

১৮ মার্চ রাতে আল-শিফা হাসপাতাল লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। রাতভর গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার মধ্যেই আল-শিফার আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে তারা।

২৬ মার্চ ভোররাতে, সেহরির প্রস্তুতিকালে, হঠাৎ ৬০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সেনা তাদের ভবনে ঢুকে পড়ে। ভবনের দরজা উড়িয়ে প্রথমেই গুলি ছুড়তে শুরু করে তারা। কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই সরাসরি হাদিলের বাবা, ৬০ বছর বয়সী মোহাম্মদ সালেহকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি দাঁড়িয়ে বলতে চেয়েছিলেন, ‘আমরা বেসামরিক মানুষ’—কিন্তু একটি শব্দ উচ্চারণ করার আগেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন।

এরপর হাদিলের বড় ভাই বিলাল (২৮) বাবাকে টেনে নিতে গেলে তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ছোট ভাই সালাহ (১৮)-কে বেধড়ক মারধর করে। এরপর তাকে গুলি না করে উলঙ্গ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সেনারা।

আহত অবস্থায় পড়ে থাকা বিলালকে জীবিত দেখে এক সেনা ফের গুলি ছুঁড়ে তাকে গলা বরাবর আঘাত করে নিশ্চিত করে যে সে মারা গেছে।

‘আমি কাঁপছিলাম, কাঁদছিলাম। বাবার জন্য ডাক্তার আনতে বলেছিলাম, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি,’ বলেন হাদিল।

সেনারা তাদের জানায়, বাবা মারা গেছেন এবং তাদের চোখের সামনেই আরও একবার বলে—’তোমার ভাইকেও আমরা মেরে ফেলেছি।’

পরিচয় যাচাই করার আগেই হত্যাকাণ্ড চালায় ইসরায়েলি সেনারা। যখন সালাহ বলেন, ‘তারা আমার বাবা ও ভাই,’ তখন একজন সেনা ব্যঙ্গ করে বলে, ‘তবে এখন তুই এই বাড়ির কর্তা।’

সালাহ জবাব দেন, ‘তোমরা কর্তা মেরে ফেলে এখন আমায় কর্তা বানাও?’ আরো একবার তাকেও হত্যা করতে উদ্যত হয় সেনারা, কিন্তু পরিবারের কান্না-আবেদন শুনে শেষমেশ তাকে ছেড়ে দেয়।

সেনারা তাদের বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণে চলে যেতে বলে। নারীরা পোশাক বদলাতে চাইলেও তাদের সামনে পোশাক বদলানোর জন্য জোর করা হয়। নারীরা রাজি না হওয়ায় শুধু নামাজের কাপড় পরিহিত অবস্থায় তাদের বের করে দেওয়া হয়।

হাদিল বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার বাবা ও ভাইয়ের লাশের কী হবে?’ জবাবে সেনারা হেসে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর তারা জানায়, উপরের ফ্ল্যাট উড়িয়ে দেবে, এবং মুহূর্তেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর সেনারা ব্যঙ্গ করে বলে, ‘রমজান কারিম’।

ভোর ৫টা ১০ মিনিটে পরিবারটি ঘর ছেড়ে দেয়। অন্ধকার রাস্তায় কান্নাভেজা চোখে তারা হাঁটছিলেন। সেনারা হুমকি দেয়, তারা যদি দক্ষিণে না যান, তবে পেছনে ট্যাংক ও ড্রোন হামলা চলবে।

২ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনারা আল-শিফা হাসপাতাল থেকে দ্বিতীয় দফায় সরে যাওয়ার পর হাদিলের পরিবার ফেরে এবং বাবার ও ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করে কবর দেয়। তবে সেই বাসায় তাঁরা আর কখনও ফিরে যাননি।

 

সূত্র: মিডল ইস্ট আই।

রাকিব

×