
ছবি: সংগৃহীত
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই শুনেছি— “আস্তে খাও”, “মন দিয়ে খাও”, কিংবা “খাওয়ার সময় কথা বলো না।” এসব উপদেশ তখন বিরক্তিকর মনে হলেও, আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এতে রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য অমূল্য কিছু বার্তা।
পুষ্টিবিদ ও গবেষকদের মতে, ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে খাওয়া বা মাইন্ডফুল ইটিং কেবল হজমের উন্নতি ঘটায় না, বরং এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মস্তিষ্ক ও পেটের সংযোগ
খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ লেসলি হেইনবার্গ জানান, আমাদের পেট ভরেছে এমন বার্তা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। ফলে ২০ মিনিটের কম সময়ে খেলে মস্তিষ্ক জানতেই পারে না যে পেট ভরে গেছে। এতে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ধীরে খাওয়ার উপকারিতা
ধীরে খেলে প্রতিটি গ্রাস ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া যায়, ফলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং পুষ্টি শোষণও কার্যকর হয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ধীরে খায়, তাদের হরমোন নিঃসরণে পেট ভরার অনুভূতি তৈরি হয়, ফলে কম খেয়েও তৃপ্তি মেলে।
২০১৮ সালে চীনে চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে স্থূলতার অন্যতম কারণ দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস। এছাড়া, এক হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত এক দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা যায়, দ্রুত খাওয়া মানুষেরা স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ১১ শতাংশ বেশি থাকেন।
দ্রুত খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব
পুষ্টিবিদ তাসনিম চৌধুরী বলেন, “দ্রুত খাওয়ার সময় খাবার ভালোভাবে চিবানো হয় না, ফলে বড় বড় টুকরো পাকস্থলীতে গিয়ে হজমে সমস্যা তৈরি করে। একই সঙ্গে বাতাস গিলে ফেলার কারণে গ্যাস, অম্লভাব ও বুক জ্বালার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, দ্রুত খেলে শরীর যথাযথভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও দ্রুত খাওয়া
জাপানে পরিচালিত একটি গবেষণায় ৫০ হাজারেরও বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যারা দ্রুত খেয়েছেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। ধীরে খাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা ছিল অনেক স্থিতিশীল।
সমাধান: ধীরে, সচেতনভাবে খাওয়া
ডা. হেইনবার্গ বলেন, “প্রতিটি মুখভর্তি খাবার ১৫-৩০ বার চিবিয়ে খাওয়া উচিত।” এছাড়া খাবারের সময় ফোন, টিভি বা বই থেকে মন সরিয়ে খাবারের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। একে বলা হয় মাইন্ডফুল ইটিং।
খাওয়ার সময় খাবারের রঙ, গন্ধ, স্বাদ, গঠন এবং চিবানোর শব্দ— সব কিছুর প্রতি মনোযোগ দিন। প্রতিটি কামড়ের পর হাত বা চামচ নিচে রেখে খান, এতে খাবার ধীরে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
খাবার শুধু শরীরের চাহিদা মেটানোর মাধ্যম নয়, বরং তা হতে পারে এক ধরনের ধ্যান, আত্মসচেতনতার অনুশীলন। ধীরে খাওয়া মানে শুধু ওজন কমানো নয়, বরং একটি সুস্থ, সচেতন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া।
আপনার খাওয়ার অভ্যাসেই লুকিয়ে আছে আপনার স্বাস্থ্য ভবিষ্যৎ। এখনই পরিবর্তন শুরু করুন।
নোভা