ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

ঝিনাইগাতিতে কাঁচা রাস্তার বেহাল অবস্থা, বৃষ্টিতে অচল জনজীবন

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ৪ জুলাই ২০২৫

ঝিনাইগাতিতে কাঁচা রাস্তার বেহাল অবস্থা, বৃষ্টিতে অচল জনজীবন

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার বিষ্ণুপুর ও নাচনমুহুরী এলাকার মানুষ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত এক কাঁচা রাস্তার দুর্ভোগ বয়ে চলেছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়ক কাদায় একাকার হয়ে যায়। কোথাও হাঁটুসমান কাদা, কোথাও আবার বড় বড় গর্ত যার ফলে শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবী মানুষ সবাই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্ষা এলেই যেন তাদের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাঁচা রাস্তাটি বিষ্ণুপুর ও নাচনমুহুরী গ্রামের একমাত্র যাতায়াত পথ। রাস্তার দুই পাশে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই রাস্তা দিয়েই এলাকার লোকজন বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নানা স্থানে যাতায়াত করেন। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ই এই রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের সোলাইমান বলেন, বর্ষাকালে এই রাস্তা চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। জুতা পরে বের হলেও কিছুদূর যেতেই পা কাদায় আটকে যায়। অনেক সময়  অসাবধানতার জন্য পড়ে যাই। জামাকাপড় ভিজে যায়। কোন রোগী অসুস্থ হলে কোন যানবাহন পাওয়া যায়না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় ফসল নিয়ে বাজারে যাওয়া খুব কষ্টের। কাদা আর গর্তে ঠেলাগাড়ি চলে না। ফলে সময়মতো ফসল বিক্রি করতে পারি না। এতে লোকসান হয়। কতবার মেম্বার চেয়ারম্যানকে বলেছি, কেউ শোনে না।

অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে স্থানীয় যুবক মোশাররফ হোসেন বলেন,একদিন রাতে বৃষ্টির মধ্যে স্ত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে হয়েছিল। রিকশা তো চলেই না, কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল। পথেই দুবার পড়ে গেছি। এখনো সেই ভয়ের কথা মনে পড়লে গা শিউরে উঠে।
স্থানীয় শিক্ষক মো: মোজাহিদ মিয়া বলেন, এলাকার জনগণের একটাই প্রশ্ন আর কতদিন এই কাদামাটির রাস্তায় হেঁটে, পড়ে, দুঃখ নিয়ে চলতে হবে। তারা দ্রুত সমাধান চায়, চায় একটি নিরাপদ ও চলাচলের উপযোগী রাস্তা।

নাচনমুহুরির বাসিন্দা শহিদুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে যেতে এই রাস্তায় হাঁটতে হয়। কাদায় পা আটকে যায়। নামাজে যাওয়ার আগেই কাপড় নোংরা হয়ে যায়। এত কষ্ট আমরা কেন করবো? রাস্তা পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বর্ষা ছাড়াও শুকনো সময়েও ধুলাবালিতে পথচলা দুর্বিষহ। কেউ সাইকেল চালাতে পারে না, মোটরসাইকেল চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ। স্কুলপড়ুয়া শিশু, বৃদ্ধ,বৃদ্ধা, গর্ভবতী নারী, রোগী সবাইকে এই পথে চলাচল করতে হয় রোজ।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এই রাস্তা পাকা না করলে গ্রামীণ জনপদের জীবনযাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে পড়বে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি, তিন খাতেই এর প্রভাব পড়ছে মারাত্মকভাবে। এখন প্রয়োজন সরকারি জরুরি বরাদ্দ ও উদ্যোগে এই কাঁচা রাস্তাটি পাকা করা।

নোভা

×