
ছবি: সংগৃহীত
অতিরিক্ত চিন্তা বা ওভারথিঙ্কিং খুব সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি হঠাৎ করে হয় না। আমাদের প্রতিদিনের কিছু সহজ-সাধারণ অভ্যাসই ধীরে ধীরে এই ‘অতিরিক্ত ভাবনার ফাঁদে’ ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করে একটু বদল আনলেই ওভারথিঙ্কিং থেকে মুক্তি সম্ভব। নিচে এমন ৯টি সাধারণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো, যেগুলো থেকেই মূলত অতিরিক্ত চিন্তা তৈরি হয়—
১. বারবার একই কথা মনে করা
আগের কথা বা কথোপকথন বারবার মনে করেন? এটা সোশ্যাল সেনসিটিভিটির লক্ষণ।
বারবার ‘রিপ্লে’ চালু হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—“এর থেকে নতুন কী তথ্য আমি পেতে পারি?”
উত্তর না থাকলে, মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
২. অন্যের খেয়াল অতি বেশি করা
আপনি হয়তো খুব সূক্ষ্ম বিষয়ও সহজে ধরতে পারেন—একটা টাইপো, কারও মুখভঙ্গি, অথবা রাস্তায় মিনিটখানেকের দেরি।
এই মনোযোগ ভালো হলেও বেশি হলে মাথায় অকারণ তথ্য জমে থাকে।
নিজেকে সীমা বেঁধে দিন—দুইবার প্রুফ পড়ার পর ইমেইল পাঠান, দুইবার পোশাক পাল্টানোর পর বের হন।
৩. মনে মনে খারাপ দৃশ্য তৈরি করা
কল্পনা ভালো, কিন্তু তার খারাপ দিক হলো—নিজের মধ্যে ভয়াবহ ‘কি হতো যদি’ ভাবনা তৈরি করা।
সমাধান—খারাপ কল্পনা শেষ হলে, ইচ্ছে করে ভালো কল্পনা শুরু করুন। একই দক্ষতা, কিন্তু ইতিবাচক ব্যবহার।
৪. সহজ কাজেও নিজে করার ঝোঁক
অতিরিক্ত দায়িত্বশীলতা ও নিয়ন্ত্রণের প্রবণতায় সহজ কাজও অন্যকে ছাড়তে পারেন না।
সমাধান—ধীরে ধীরে ছোট কাজ ভাগ করুন। শুরুতে শুধু মন্তব্যের সুযোগ দিন, পরে সম্পাদনার সুযোগ দিন।
৫. সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও অনুশোচনা করা
একটা সিদ্ধান্ত নিয়েও সেটি নিয়ে বারবার চিন্তা করলে, সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা হারায়।
উপায়—প্রতিটি সিদ্ধান্তকে ‘পরীক্ষা’ হিসেবে নিন। যেমন, ‘চাকরি ছাড়ব কিনা?’ না ভেবে বলুন, “৬ মাস ফ্রিল্যান্সিং করে দেখি।”
৬. বারবার নিশ্চয়তা খোঁজা
বারবার যাচাই করা, ইমেইল পাঠানোর আগে কয়েকবার চেক করা বা গুগলে একই বিষয় খোঁজা ওভারথিঙ্কিংয়ের লক্ষণ।
উপায়—যখন মনে হবে ‘আরেকবার জিজ্ঞেস করি’, তখন ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। পরদিনও দরকার মনে হলে, তবেই জিজ্ঞেস করুন।
৭. বিশ্রামকেও পরিকল্পনা করে ফেলেন
অনেকেই বিশ্রামের সময়ও পরিকল্পনা করে ফেলেন।
উপায়—‘নো প্ল্যান’ সময় রাখুন। যেমন, ২ ঘণ্টা শুধু বই, কফি আর প্রকৃতির মাঝে কাটান, কোনো ফোন বা অ্যাপ নয়।
৮. একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা
একসঙ্গে অনেক ট্যাব, চ্যাট বা মিউজিক চালিয়ে রাখেন? এতে মনোযোগ সবসময় অন্যদিকে চলে যায়।
উপায়—একসঙ্গে শুধু এক কাজ করুন। ২৫ মিনিট টাইমার সেট করুন, অন্য কিছু দেখবেন না।
৯. সব সিদ্ধান্তেই অন্যের মতামত চান
প্রতিটি সিদ্ধান্তে বন্ধুদের জিজ্ঞেস করা, ভিডিও দেখা বা ফোরাম ঘাঁটাঘাঁটি করলে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়।
উপায়—মাত্র ৩টি বিশ্বস্ত উৎস থেকে মতামত নিন, ৬০ মিনিট সময় দিন সিদ্ধান্তের জন্য। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ করুন।
ওভারথিঙ্কিং কোনো দুর্বলতা নয়, বরং আপনারই কিছু ভালো গুণের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার—উচ্চ সহানুভূতি, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ক্ষমতা আর দায়িত্ববোধ।
এই অভ্যাসগুলো একটু নিয়ন্ত্রণ করলেই একই গুণ আপনার বড় শক্তিতে পরিণত হবে।
দিনে দিনে ছোট ছোট পরিবর্তন আনুন—কম চিন্তা, সীমিত ‘চেক’, স্বস্তির সময় তৈরি করুন।
তাহলেই অতিরিক্ত ভাবনা আর ফাঁদ নয়, বরং আপনার সেরা শক্তি হয়ে উঠবে।
আবির