ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

সেনা অভিযানে অপহৃত তিন ছাত্র উদ্ধার: কিশোর গ্যাংয়ের নেটওয়ার্কের চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচিত

মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:৩১, ৪ জুলাই ২০২৫

সেনা অভিযানে অপহৃত তিন ছাত্র উদ্ধার: কিশোর গ্যাংয়ের নেটওয়ার্কের চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচিত

ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকায় সেনাবাহিনীর ঝটিকা অভিযানে অপহৃত তিন ছাত্রকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। একই অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের চার সক্রিয় সদস্য এবং উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, মাদক এবং অপরাধ সংঘটনের নানা সরঞ্জাম, যা কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তৃত অপরাধ নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অপহৃত ছাত্রদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করেছিল অপহরণকারীরা। সেনাবাহিনীর বগুড়া সদর ক্যাম্পের টহল দল, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ রায়হান আকাশের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং গ্রেপ্তার করে চারজনকে, যাদের নাম মো. আবির হোসেন বিদ্যুৎ (২৭), ওয়াজ মন্ডল (৩৬), মো. মাসুম আলম নায়েম (২৭) এবং মো. মেহেদী হাসান (২৩)।

অভিযানে জব্দ করা হয়েছে সাতটি বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র, তেরোটি সিম কার্ড, ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি চেক, তিনটি ফাঁকা স্ট্যাম্প পেপার, একটি কম্পিউটার সেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদের বোতল এবং গাঁজা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম।

সূত্র আরও জানিয়েছে, এসব আলামত কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধী কর্মকাণ্ডের নেটওয়ার্ক এবং আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ বহন করে। বগুড়া ও আশেপাশের জেলায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের বিষয়। শেরপুরে কিশোরদের দেশীয় অস্ত্রের মহড়া এবং দোকানদারদের চাঁদা দাবির ঘটনা বা সাতমাথায় স্কুল ব্যাগে ছুরি, মাদক বহন এবং নারী উত্ত্যক্তের মতো ঘটনা প্রমাণ করে, কিশোর অপরাধীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

সমাজবিজ্ঞানী এবং আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষকদের মতে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, অভিভাবকদের নজরদারির অভাব, বন্ধুত্বের ভুল নির্বাচন, মাদক সেবনের প্রবণতা, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘হিরো’ ভাব তৈরি সবই এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং মনে করছেন, এ ধরনের অভিযান কিশোর অপরাধীদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু অভিযানই যথেষ্ট নয়, বরং স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা কর্মসূচি, অভিভাবকদের জন্য সামাজিক সচেতনতা ক্যাম্পেইন, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক মদদ বন্ধে প্রশাসনিক কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

সেনাবাহিনীর এই অভিযান প্রমাণ করেছে, অপরাধ দমনে দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ অপরিহার্য, তবে সামাজিক ও পারিবারিক স্তরে সমস্যার মূল শিকড় উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত কিশোর অপরাধের স্রোত থামানো সহজ হবে না।

রাকিব

×