
.
দুর্নীতি মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর। সব শ্রেণির মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে এনসিপির সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় পীরগঞ্জ পূর্ব চৌরাস্তায় এক জনসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেকে নতুনভাবে গড়ার লক্ষ্যে এবং জুলাইয়ে শহীদদের রক্ত ও আত্মত্যাগকে আমরা যুগ যুগ স্মরণ করব। উত্তরবঙ্গকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। এ রাজনৈতিক দলটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো নয়। আমরা দেশকে ভালোবাসি, দেশের সংস্কার ও উন্নয়নে আমরা বিশ্বাসী। কথায় নয়, আমরা দেশবাসীকে আমাদের কাজে কর্মে প্রমাণ দিতে চাই।
এ সময় নতুন আঙ্গিকে রাষ্ট্র গঠন ও জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দেন এনসিপির নেতারা। উক্ত জনসভায় বক্তব্য প্রদান করেন উত্তর বঙ্গের সমন্বয়ক সারজিস আলম, দক্ষিণ বঙ্গের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সমন্বয়ক সামান্তা শারমিন, প্রথম সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, ঠাকুরগাঁও জেলা সমন্বয়ক গোলাম মোর্তুজা সেলিম ও অন্যান্যরা।
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ হয়নি ॥ শুক্রবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখানো বিলোপ হয়নি। আগের সিস্টেম রয়েছে। সেই সিস্টেমের বিলোপ করে নতুন দেশ গঠনের জন্যই আমাদের এই নতুন পার্টি এবং কর্মসূচি। জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যক্রম সারাদেশেই চলছে।
এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করার ও তরুণ এবং নতুন নেতৃত্বকে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র, মৌলিক সংস্কার, জুলাই গণহত্যার বিচার এবং নতুন সংবিধানের জন্য আমরা লড়াই করছি। তাই অবশ্যই জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র দিতে হবে এবং সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে জুলাই ঘোষণাপত্রে। যে কারণে আমাদের দেশের হাজারো মানুষ রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে। আমরা তাদের স্মরণ করতে চাই। তাদের আত্মত্যাগ ও আকক্সক্ষার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক সমাজ অবহেলিত রয়েছে। তারা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। আমরা সেই কৃষকদের জন্য কাজ করতে চাই। সেই কৃষকের সন্তানেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তারাই কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিল। ফলে কৃষকের সন্তান ও কৃষকের মাটি ঠাকুরগাঁও থেকেই আমরা আমাদের নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্নের কথা বলছি সেই দেশে গড়তে চাই।
সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জানি ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমান্ত হত্যা একটি বড় সমস্যা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। দেশের মানুষের মানবাধিকার হরণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখি ভারতে যারা মুসলিম রয়েছে তাদের অবৈধ অভিবাসী বলে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হচ্ছে।
যে কোনো মূল্যে এসব বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, এটা হাসিনার বাংলাদেশ নয়। গণঅভ্যুত্থানের পর এটা ছাত্র জনতার বাংলাদেশ। বাংলাদেশপন্থিদের হাতে বাংলাদেশ চলবে। ফলে এই সীমান্ত হত্যা আমরা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করব এবং উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁওসহ যেসব অবহেলিত জেলা রয়েছে সেখানে কোনো ধরনের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না।
৩ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য ইস্তেহার ঘোষণা করবে এনসিপি ॥ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র, মৌলিক সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের জন্য আমরা লড়াই করছি। জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করতে হবে। সেই আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ব। যেখানে বৈষম্য থাকবে না, ফ্যাসিবাদ থাকবে না। আমরা দেশে নতুন করে আর কাউকে স্বৈরাচার হতে দেব না। আগামী ৩ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য ইস্তেহার ঘোষণা করবে এনসিপি।’ শুক্রবার বিকেলে দিনাজপুর ইনস্টিটিউটের সামনে জুলাই পদযাত্রার এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপির গাড়িবহরে হামলা ॥ জুলাই পদযাত্রায় অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কর্মসূচি শেষে পীরগঞ্জে যাওয়ার পথে টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও আর্ট গ্যালারি মসজিদে নামাজ শেষে পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় এনসিপির গাড়িবহর। কিছুক্ষণ পরই টাঙ্গন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় একটি আন্তঃজেলা বাস চাপা দেয় এনসিপির গাড়িবহরে। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে ঘটনার কৈফিয়ত চাইতে গেলেই তাদের ওপরে হামলা করে ৫ থেকে ৬ অচেনা মানুষ। এতে গাড়িচালকসহ এক এনসিপি কর্মী আহত হন।
এনসিপি দাবি করছে, এই হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। প্রথমে বাস চাপা দিয়ে দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের হত্যা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে তারা সঠিক গাড়ি চিহ্নিত করতে পারেনি। পরে গাড়িতে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলা করে।
ঠাকুরগাঁও এনসিপির মুখপাত্র অপু বলেন, হামলাকারীরা মূলত নাহিদ বা সারজিসদের টার্গেট করেছিল বলে ধারণা করা যায়। প্রথমে যেহেতু বাস চাপা দেওয়া হয়েছে, ধারণা করা যায়- উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি হত্যা। এর সঠিক তদন্ত দাবি করছি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি জানামাত্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এনসিপি অভিযোগ করছে এটি হামলার ঘটনা। প্রাথমিকভাবে একজন হামলাকারীর ভিডিও তারা দেখিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।