
সংগৃহীত
একটা সময় ছিল, যখন বন্ধুরা দূরে সরে যেত বা উপহাস করত, তখন আমরা কেঁদে ঘরে ফিরে আসতাম কিন্তু কাউকে বলতাম না কিছুই। আজকের শিশুরাও ঠিক তেমনই অনুভব করে, তবে তাদের প্রকাশের ভাষা আরও জটিল।
বন্ধুরা এড়িয়ে গেলে কিংবা উপহাস করলে শিশুরা নিজেকে 'অপ্রয়োজনীয়' ভাবতে শুরু করে। এই অনুভূতি শিশুদের আত্মবিশ্বাস, সামাজিক দক্ষতা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তবে অভিভাবকদের সচেতনতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব। টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্তানকে এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে বাবা-মায়েরা যা করতে পারেন
১. শিশুকে মন দিয়ে শুনুন, কথা বলার সুযোগ দিন
- শিশু কষ্টের কথা বললে বাধা না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কোনো মন্তব্য না করে আগে তার অনুভূতি বুঝে নিন। কখনো বলবেন না, “এত ছোট কথা নিয়ে মন খারাপ করিস কেন?” বরং বলুন, “তোর কথা শুনে আমি বুঝতে পারছি তুই কতটা কষ্টে আছিস।”
২. অনুভূতিগুলো স্বীকৃতি দিন
- শিশুর অনুভবকে হালকা করে দেখা ভুল। বলুন, “তুই কষ্ট পাচ্ছিস, এটা স্বাভাবিক। বন্ধুরা কখনো এমন আচরণ করলে যে কেউ কষ্ট পাবে।” এতে শিশু নিজেকে বোঝা এবং গ্রহণযোগ্য মনে করে।
৩. তাড়াহুড়ো করে ‘সমাধান’ দেবেন না
- শিশু যখন বলছে “ওরা আমার সঙ্গে কথা বলে না”, তখন দ্রুত বলে ফেলা “নতুন বন্ধু খুঁজে নে” এই উপদেশ হয়ত বাস্তব, কিন্তু অমানবিক শোনায়। বরং তার পাশে থেকে বুঝিয়ে দিন, আপনি তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
৪. সামাজিক দক্ষতা শেখাতে সাহায্য করুন
- এসব শিশু সামাজিকভাবে সমানভাবে দক্ষ নয়। শেখান, কীভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে হয়, কীভাবে ‘না’ বলতে হয় বা কীভাবে বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া যায়।
৫. আত্মমর্যাদা গড়তে উৎসাহ দিন
- বন্ধুরা উপেক্ষা করলে শিশুর ভেতরে নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্মায়। তাই শিশুকে বলুন, সে কতটা ভালো গায়, আঁকে বা সহানুভূতিশীল—তাতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
৬. বিকল্প বন্ধুত্বের সুযোগ তৈরি করুন
- স্কুলের বাইরে নাট্যচর্চা, খেলাধুলা, আঁকাআঁকির ক্লাস বা কোনো দলভুক্ত কর্মকাণ্ডে যুক্ত করুন, যেখানে সে নতুন বন্ধু পেতে পারে। এতে শিশুর মন ভালো থাকবে।
৭. প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন
- অনেক সময় শিশুর কষ্ট এতটাই গভীর হয় যে, তা সামাল দিতে হয় একজন শিশুবিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্যে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য গুরুত্ব দিয়ে দেখুন।
- শিশুর পাশে থাকুন—তা হলে সে কখনও একা থাকবে না
সাময়িক উপেক্ষা হোক বা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া এগুলো শিশুর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। বাবা-মায়ের সহানুভূতি ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে শিশুর ভেতরে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে।
সন্তান যদি বলে, “ওরা আমার সঙ্গে খেলতে চায় না” তখন শুধু বলুন, “তুই একা না, আমি আছি।” হয়ত এতটুকু বলাটাই তার মন ভরিয়ে দেবে।
হ্যাপী