ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

সকালের সময়ের মূল্য কেন সবচেয়ে বেশি? সাফল্যের শুরুটা সকাল থেকেই!

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৬:০৭, ৫ জুলাই ২০২৫

সকালের সময়ের মূল্য কেন সবচেয়ে বেশি? সাফল্যের শুরুটা সকাল থেকেই!

ছ‌বি: প্রতীকী

মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো সময়। কিন্তু সব সময়ের মূল্য সমান নয়। বিশেষ করে সকাল শুধু দিনের শুরু নয়, এটি একজন মানুষের মানসিকতা, শৃঙ্খলা ও সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আপনি যদি সফল ব্যক্তিদের জীবনী ও দৈনন্দিন অভ্যাস লক্ষ্য করেন, দেখবেন তারা সকালের সময়টাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এ সময়টিকে তারা নিজের আত্মউন্নয়ন, পরিকল্পনা, এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য ব্যবহার করেন।

সকালের সময়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এটি হয় তুলনামূলকভাবে শান্ত ও ব্যস্ততাহীন। যখন পুরো পৃথিবী এখনো ঘুমাচ্ছে কিংবা জাগছে মাত্র, তখন চারপাশের পরিবেশ হয় একেবারে নিঃশব্দ। এই নিঃশব্দতা এক ধরনের মানসিক স্বস্তি দেয়, যা চিন্তা করার, আত্মবিশ্লেষণের এবং নতুন দিনের পরিকল্পনা সাজানোর জন্য আদর্শ। বিখ্যাত লেখক ও সফল উদ্যোক্তারা প্রায়শই বলেন, সকালে মস্তিষ্ক সবচেয়ে তাজা থাকে, চিন্তাভাবনা হয় স্বচ্ছ এবং মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটায় এমন কিছু থাকে না। এই সময়ে পাঠ্যবই পড়া, লেখালেখি, ধ্যান কিংবা ব্যায়াম করলে তার প্রভাব সারা দিন ধরে থাকে।

সফল মানুষদের অনেকের অভ্যাসেই দেখা যায়, তারা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। স্টারবাকসের সিইও হাওয়ার্ড শুল্টজ সকাল ৪:৩০-এ ঘুম থেকে ওঠেন, অ্যাপলের সিইও টিম কুক সকাল ৪টার দিকে দিন শুরু করেন। আর ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালাম কিংবা স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহাপুরুষরাও দিনে সবচেয়ে আগে কাজ শুরু করতেন। কেন তারা এত সকালে উঠতেন? কারণ তারা জানতেন, সকালের সময়ই তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও লক্ষ্যপূরণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

সকালের একটি বড় সুবিধা হলো এটি ‘নিজের জন্য সময়’ তৈরি করে দেয়। দিনের অন্যান্য সময় আমরা পরিবারের দায়িত্ব, অফিসের চাপ, সামাজিক যোগাযোগ ও নানা প্রকার ব্যস্ততায় ডুবে থাকি। কিন্তু সকালটুকু আমরা চাইলে একান্তভাবে নিজের জন্য ব্যয় করতে পারি। এই সময়েই ধ্যান, প্রার্থনা, বই পড়া কিংবা ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণের মতো কাজগুলো করা যায়, যা আত্মশুদ্ধি ও মানসিক স্থিতির জন্য খুব দরকার।

সকালের অভ্যাস গঠনের মধ্যে রয়েছে শৃঙ্খলা শেখার অপূর্ব সুযোগ। আপনি যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারেন, তাহলে সেটা আপনার মস্তিষ্কে একটা শক্তিশালী বার্তা পাঠায়— "আমি নিয়ন্ত্রণে আছি।" এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং অন্য কাজেও শৃঙ্খলা ধরে রাখার মানসিকতা তৈরি করে। সফল মানুষদের আত্মবিশ্বাস আর আত্মনিয়ন্ত্রণ দুই গুণই তাদের এগিয়ে রাখে, আর এর বীজ বপন হয় প্রতিদিনের সকালের সময় থেকেই।

সকালে ব্যায়াম করা আরেকটি অভ্যাস, যা প্রায় সব সফল মানুষের জীবনে বিদ্যমান। সকালে শারীরিক কসরত শরীরকে চনমনে করে তোলে, মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ‘এন্ডরফিন’ নামক হরমোন নিঃসরণ ঘটায়, যা মানুষকে আনন্দিত করে তোলে। সকালবেলা শরীরচর্চা করলে সারা দিন মেজাজ ভালো থাকে এবং কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়ে। শুধু তাই নয়, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য রক্ষা করতেও সাহায্য করে।

আরও একটি বিষয় হলো, সকালের সময় মানে নতুন একটি সূচনা। গতকাল যদি খারাপও কেটেছে, তাহলে আজকের সকাল হতে পারে এক নতুন সুযোগ। সফল ব্যক্তিরা কখনো অতীতের ব্যর্থতায় আটকে থাকেন না, তারা সামনে এগিয়ে যেতে জানেন। সকালের সূর্যের আলো সেই অগ্রযাত্রারই প্রতীক, যা একজন মানুষকে তার নতুন পথের দিক দেখায়। সকালে উঠে আত্মবিশ্লেষণ ও ধ্যান করার মাধ্যমে অনেকেই তাদের মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করেন এবং নতুন উদ্যমে দিন শুরু করেন।

পরিকল্পনা করা হচ্ছে সকালের আরেকটি শ্রেষ্ঠ ব্যবহার। দিনের কাজগুলো যদি আগে থেকেই একবার ঝালিয়ে নেওয়া যায় কিংবা লিখে ফেলা যায়, তাহলে সারা দিন সময় অপচয় কম হয়, অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তহীনতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। সফল ব্যক্তিরা কখনোই কাজগুলো এলোমেলোভাবে করেন না। তারা দিনের শুরুতেই দিনটিকে ‘জয়’ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন।

সকালে মনসংযোগ ভালো থাকে বলেই শেখার কাজটি এই সময় সবচেয়ে কার্যকর হয়। যারা লেখাপড়া করছেন কিংবা নিজের জ্ঞান বাড়াতে চান, তাদের জন্য সকালের সময় সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময় আপনি কোনো বই পড়লে তা দীর্ঘদিন মনে থাকবে, কারণ ব্রেইন তখন ক্লান্ত নয় এবং তথ্য গ্রহণের ক্ষমতা অনেক বেশি। এজন্যই অনেক পরীক্ষার্থী সকালবেলা পড়তে পছন্দ করেন।

সবশেষে বলা যায়, সকালের সময় মানেই আত্মশাসনের অনুশীলন। সকালে ঘুম থেকে ওঠা কঠিন হলেও যারা সেটা করতে পারেন, তারা ধীরে ধীরে আত্মা, মন, সময়, এমনকি ভবিষ্যৎ— সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে শেখেন। সফলতা কখনোই হঠাৎ আসে না। এটি দিনের পর দিন গড়া অভ্যাসের ফল। সকালের এই মূল্যবান সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আপনি যদি প্রতিদিন নিজেকে এক ধাপ উন্নত করেন, তবে মাসের শেষে, বছরের শেষে কিংবা জীবনের শেষে আপনি নিজেকেই নতুন রূপে খুঁজে পাবেন।

সুতরাং, যদি আপনি সত্যিই সাফল্যের দিকে যাত্রা শুরু করতে চান, তাহলে সকালে শান্ত, প্রস্তুত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে দিন শুরু করুন। কারণ, সফল মানুষের পথ শুরু হয় সকাল থেকেই।

এম.কে.

×