
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের কেরালার থিরুভনন্তপুরম বিমানবন্দরে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আটকে আছে অত্যাধুনিক ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান এফ-৩৫বি। এই ঘটনা কৌতূহল ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—এত উন্নত প্রযুক্তির একটি বিমান কীভাবে একটি বিদেশি দেশে দিনের পর দিন আটকে থাকতে পারে?
এই বিমানটি ১৪ জুন দক্ষিণ ভারতের কেরালার থিরুভনন্তপুরম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওই সময় এটি ভারত মহাসাগরে একটি মহড়ায় অংশ নিচ্ছিল এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে এটি রয়্যাল নেভির যুদ্ধজাহাজ ‘এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস’-এ ফিরতে পারেনি।
বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করলেও পরবর্তীতে এটি কারিগরি সমস্যায় পড়ে এবং এখনো বিমানবন্দরেই অবস্থান করছে। এই সময়ের মধ্যে ‘এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস’ থেকে ইঞ্জিনিয়াররা এসে সমস্যাটি নির্ধারণ করার চেষ্টা করলেও তারা এখনও এটি ঠিক করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার, ব্রিটিশ হাইকমিশন বিবিসিকে জানায়: “বিমানটি বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত স্থাপনায় (MRO) সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ দল ও যন্ত্রপাতি আসার পর এটি হ্যাঙ্গারে নেওয়া হবে।”
হাইকমিশন আরও জানায়, “মেরামত ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের পর বিমানটি আবার সক্রিয় পরিষেবায় ফিরবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রাউন্ড টিম ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।”
থিরুভনন্তপুরম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তিবিদদের একটি দল শুক্রবারে আসবে বলে তারা আশা করছে। প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলারের (৮০ মিলিয়ন পাউন্ড) এই যুদ্ধবিমানটিকে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছেন রয়্যাল এয়ার ফোর্সের ছয়জন কর্মকর্তা।
মুম্বাইয়ের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. সমীর পাটিল বলেন, ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সামনে এখন দুটি পথ রয়েছে—এটি মেরামত করে উড়িয়ে নেওয়া অথবা একটি বিশাল মালবাহী সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানে তুলে নিয়ে যাওয়া।
এই ঘটনাটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও উঠেছে। বিরোধীদলীয় এমপি বেন ওবেসে-জেক্টি সরকারকে প্রশ্ন করেছেন, “এই বিমান পুনরুদ্ধারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কত সময় লাগবে, এবং হ্যাঙ্গারে থাকা অবস্থায় এর গোপন প্রযুক্তির নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে?”
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লুক পোলার্ড জানান, বিমানটি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি, যারা প্রথম শ্রেণির সহায়তা দিয়েছেন। রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সদস্যরা সর্বক্ষণ পাশে থাকায় এর নিরাপত্তা ভালোভাবেই নিশ্চিত করা হয়েছে।”
এই ঘটনায় কেরালা পর্যটন বিভাগও হালকা ব্যঙ্গ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দেয়। তাতে বলা হয়, “কেরালা, এমন এক গন্তব্য—যেখানে কেউই ফিরে যেতে চায় না।” একটি AI-জেনারেটেড ছবিতে দেখা যায়, এফ-৩৫বি একটি রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে, পেছনে নারিকেল গাছের সারি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যেই এ নিয়ে মিম ও রসিকতা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মজা করে লিখেছেন, এই বিমানটিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত; কেউ বলেছে, বিমানবন্দর ভাড়া নেওয়া হোক—পূরাণ থেকে কোহিনূর হীরাকে ভাড়ার টাকা হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. পাটিল মনে করেন, প্রতিদিন এই বিমান আটকে থাকায় রয়্যাল নেভির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, “এটি যদি শত্রু ভূখণ্ডে ঘটত, তাহলে কি এত সময় নেওয়া হতো?”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এটা কি প্রফেশনাল নেভির SOP অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে? না হলে এটি রীতিমতো খারাপ PR (জনসংযোগ) হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা