
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI-এর একটি নতুন কৌশলের পর্দাফাঁস হয়েছে, যেখানে পশ্চিম এশিয়া, নেপাল এবং ভারতের ভেতরে জালের মতো বিস্তৃত গুপ্তচর নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য পায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি, যখন এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে এক নেপালি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে দিল্লির বিশ্বাস নগর এলাকায় ফাঁদ পেতে গ্রেপ্তার করা হয় নেপালের রাউতাহাট জেলার বাসিন্দা আনসারুল মিয়া আনসারিকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, প্রিন্টার, এবং গোপন সেনা নথিপত্র। উদ্ধার হওয়া সামগ্রীতে ছিল ১৯৮২ সালের "Fighting in Built-Up Areas" নামে ভারতীয় সেনার প্রশিক্ষণ বই এবং অন্যান্য গোপন ‘CONFIDENTIAL’ ও ‘SECRET’ মার্কড ম্যানুয়াল।
গ্রেপ্তারের আগে, আনসারি একটি অত্যন্ত গোপন তথ্যসমৃদ্ধ সিডি টয়লেটে ফ্লাশ করে দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দাদের ধারণা, আটক এড়াতে তিনি সচেতনভাবেই এটি ধ্বংস করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনসারি স্বীকার করেছেন, তিনি ২০০৮ সাল থেকেই ISI-এর হয়ে কাজ করছেন। পাকিস্তানি হ্যান্ডলার “ইয়াসির”-এর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। নির্দেশনা আসত ভয়েস কল বা এনক্রিপ্টেড চ্যাটে।
আনসারি নেপাল থেকে ভারতের ভেতরে নিয়মিত প্রবেশ করতেন, যেখানে তিনি মাটির নিচে সক্রিয় ইন্টারমিডিয়ারিদের কাছ থেকে সেনা সংক্রান্ত ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতেন এবং নেপাল হয়ে তা পৌঁছে দিতেন পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের হাতে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, আনসারুল মিয়া আনসারি একা নয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ভারতীয় ব্যক্তি এই গুপ্তচর কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে। তাদের মধ্যে দু’জনের নাম উঠে এসেছে— ‘পিন্টু’ এবং ‘আখলাক আজম’।
কে এই পিন্টু?
পিন্টু একজন দিল্লি-ভিত্তিক কুরিয়ার হিসেবে পরিচিত। তার কাজ ছিল গোপন তথ্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, পিন্টু সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভর্তি সিডি আনসারির হাতে তুলে দিয়েছিল দিল্লির বাস টার্মিনাল (ISBT)-এর আশপাশে।
আনসারি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সিডিটি ছিল এতটাই গোপন ও স্পর্শকাতর যে গ্রেপ্তার হবার আগমুহূর্তে সে তা ভেঙে ফেলে ও টয়লেটে ফ্লাশ করে দেয়, যাতে কেউ সেটি উদ্ধার না করতে পারে।
আখলাক আজমের ভূমিকা কী?
আখলাক আজম ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলার বাসিন্দা। তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, সে আনসারিকে ভারতের ভেতরে চলাচল, থাকার জায়গা এবং অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তা দিত। অর্থাৎ, আনসারি যখন ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করত, তখন আখলাক তার নিরাপদ থাকা ও মুভমেন্টের ব্যবস্থা করত।
গোয়েন্দারা আখলাকের মোবাইল ফোন জব্দ করেছে এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণে তার ফোনে পাকিস্তানি নম্বর থেকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ও কলের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মেসেজে রয়েছে সাংকেতিক ভাষা, যোগাযোগের নির্দেশ, ও বিদেশি হ্যান্ডলারের উল্লেখ।
ফরেনসিক বিশ্লেষণে আনসারির মোবাইলে পাকিস্তানি নম্বর থেকে আসা ভয়েস কল ও চ্যাটে সেনাবাহিনীর অবস্থান, কৌশলগত রুট এবং শহরে যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজির ছাপ পাওয়া গেছে। বিষয়টি এখন ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ (DGMI)-এর তদন্তাধীন।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ISI এখন আর সরাসরি সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে না, বরং নেপাল বা পশ্চিম এশিয়ার নাগরিকদের দিয়ে ভারতে তথ্য জোগাড় করাচ্ছে, যাদের চলাফেরা চোখে পড়ে না।
গত কয়েক সপ্তাহে গোটা ভারতে আরও অন্তত ১৫ জনকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ উঠেছে। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট ও পাঞ্জাব থেকে এই গ্রেপ্তার হয়েছে।
মুমু ২