ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

শুধু ECG করালেই যথেষ্ট নয় হৃদ্‌রোগ শনাক্তে, আরও যেসব পরীক্ষার প্রয়োজন

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫২, ৪ জুলাই ২০২৫

শুধু ECG করালেই যথেষ্ট নয় হৃদ্‌রোগ শনাক্তে, আরও যেসব পরীক্ষার প্রয়োজন

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি অভিনেত্রী ও মডেল শেফালী জারিওয়ালার (যিনি 'কাঁটা লাগা গার্ল' নামে পরিচিত) ৪২ বছর বয়সে মৃত্যুর ঘটনায় হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, তার মৃত্যু কম রক্তচাপ, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, খালি পেটে নেওয়া একটি অ্যান্টি-এজিং ইনজেকশন এর পিছনে দায়ী থাকতে পারে।

এ বিষয়ে এইচটি লাইফস্টাইল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, ড. রাজীব বসিষ্ঠ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওথোরাসিক ও কার্ডিয়াক সার্জন (ভাসকুলার সার্জারি), এইচসিজি হাসপাতাল, ভাবনগর, বলেন যে, কেবল ECG নির্ভর করে হৃদ্‌রোগ শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

ECG কী?
ECG বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম হল একটি স্বল্প সময়ের, অ-আক্রমণাত্মক চিকিৎসা পদ্ধতি যা হৃদ্‌যন্ত্রের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে। এর মাধ্যমে হার্টবিটের অনিয়ম, আগের হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্‌যন্ত্রের গঠনগত সমস্যা শনাক্ত করা যায়। তবে, ড. বসিষ্ঠ স্পষ্ট করে বলেন, ECG সব কিছু শনাক্ত করতে পারে না।

ECG-ই কি যথেষ্ট?
ড. বসিষ্ঠ বলেন, “ভারতে অনেক তরুণ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার একটি বড় কারণ হল ECG-কে যথেষ্ট বলে মনে করা।” অনেকেই মনে করেন ECG স্বাভাবিক এলেই হৃদ্‌যন্ত্র একেবারে সুস্থ। কিন্তু বাস্তবে ECG স্বাভাবিক এলেও, অনেক ক্ষেত্রে হৃদ্‌রোগের প্রাথমিক ঝুঁকিগুলি থেকে যায়।

তিনি জানান, ECG শুধু হৃদ্‌যন্ত্রের বৈদ্যুতিক গতিবিধি দেখায়, কিন্তু রক্তনালির ব্লকেজ কিংবা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিসের মতো নীরব বিপদগুলো শনাক্ত করতে পারে না। এজন্য আরও কিছু পরীক্ষা করা জরুরি।

কোন পরীক্ষাগুলো জরুরি?
ড. বসিষ্ঠ সুপারিশ করেন, একটি পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক স্ক্রিনিংয়ের জন্য ECG ছাড়াও নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত—

লিপিড প্রোফাইল (কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড চেক করতে)

উপবাস অবস্থায় ব্লাড সুগার বা HbA1c (ডায়াবেটিস শনাক্তে)

রক্তচাপ মাপা

BMI

ইকোকার্ডিওগ্রাম বা স্ট্রেস টেস্ট (বিশেষ করে যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা বুক ধড়ফড়/শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে)

হৃদ্‌রোগে সচেতনতা জরুরি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১.৭৯ কোটি মানুষ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে মারা যান। ভারতের মতো দেশে মোট মৃত্যুর ২৮% হৃদ্‌রোগজনিত।

অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা, গায়ক কেকে, কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব ও অভিনেতা পুনীত রাজকুমারসহ বহু জনপ্রিয় তারকা অল্প বয়সে হৃদ্‌রোগে মারা গেছেন। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে শুধু ECG নয়, আরও বিস্তৃত পরীক্ষা এবং আগাম সচেতনতা খুবই জরুরি।

শেষ কথায়, মনে রাখতে হবে—ECG একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হলেও, এটি যথেষ্ট নয়। হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক জীবনযাপন এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়াই বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস 

নোভা

×