ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

ফুসফুস ক্যান্সারের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যেগুলো আমরা সহজেই এড়িয়ে যাই!

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৪৮, ৪ জুলাই ২০২৫

ফুসফুস ক্যান্সারের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যেগুলো আমরা সহজেই এড়িয়ে যাই!

ছ‌বি: প্রতীকী

ফুসফুসের ক্যান্সার মানেই কি দীর্ঘস্থায়ী কাশি, রক্তসহ কফ বের হওয়া বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া? বাস্তবে কিন্তু এই রোগটি অনেক সময় এতটা নাটকীয়ভাবে শুরু হয় না। বরং নীরবে, খুব সাধারণ কিছু উপসর্গ নিয়ে ধীরে ধীরে এগোয়। ফলে অনেকেই তা সাধারণ ঠান্ডা, মানসিক চাপ কিংবা বার্ধক্যজনিত সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যান। অথচ এসব ছোট ছোট উপসর্গই হতে পারে এক মারাত্মক রোগের শুরু। চলুন জেনে নিই ফুসফুসের ক্যানসারের এমনই ৫টি লক্ষণ, যেগুলো প্রায়ই নজর এড়িয়ে যায়।

১. কাঁধে ব্যথা, অথচ কাঁধের কোনো সমস্যা নেই 

অনেকেই কাঁধে ব্যথা হলে ধরে নেন, হয়তো খারাপ ভঙ্গিতে বসেছেন বা ঘুমিয়েছেন। আবার কেউ ভাবেন ফ্রোজেন শোল্ডার হয়েছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ‘পাঙ্কোস্ট টিউমার’ নামক ফুসফুসের ওপরের অংশে হওয়া টিউমার হলে এই ব্যথা শুরু হয় কাঁধে এবং ছড়িয়ে পড়ে হাতে। যেহেতু ফুসফুসে সরাসরি ব্যথার অনুভূতি থাকে না, তাই আশেপাশের স্নায়ুতে চাপ পড়লেই এমন ব্যথা হয়। সাধারণ ব্যথার ওষুধ বা স্ট্রেচিংয়ে এই ব্যথা কমে না, ফলে অনেক সময় একে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

২. গলার স্বরে পরিবর্তন, যেটা গুরুত্ব পাচ্ছে না 

গলার স্বর বসে যাওয়া বা রুক্ষ হয়ে যাওয়া আমরা অনেক সময়ই তেমন গুরুত্ব দিই না। অতিরিক্ত কথা বলা, ধুলাবালি, শুষ্ক আবহাওয়া এসবই দায়ী ভেবে নিই। কিন্তু যদি গলার স্বর ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে বা অনেকদিন স্থায়ী থাকে, তা হতে পারে আশঙ্কার কারণ। টিউমার যদি কণ্ঠনালীর স্নায়ুতে চাপ দেয়, তাহলে গলার স্বর দুর্বল বা নিশ্বাস কাটা কাটা শোনায়। এটি সাধারণ কণ্ঠস্বরের সমস্যার মতো নয়, বরং একটি স্থায়ী পরিবর্তন।

৩. এক চোখে পাতলা হয়ে যাওয়া ও ছোট পুতলি 

চোখ ক্লান্ত, স্নায়ু দুর্বলতা বা মাথাব্যথা এসব ধরে অনেকেই এড়িয়ে যান। কিন্তু এক পাশে চোখের পাতা ঝুলে পড়া (ptosis), পুতলি ছোট হয়ে যাওয়া (miosis), এবং ঘামের পরিমাণ কমে যাওয়া—এই তিনটি উপসর্গ একত্রে দেখা দিলে তাকে বলে Horner’s Syndrome। এটি ঘটে যখন ফুসফুসের ওপরের অংশে থাকা টিউমার পাশের স্নায়ুগুলোকে আক্রান্ত করে। যেহেতু এই উপসর্গগুলো ব্যথাহীন এবং খুব ধীরে দেখা দেয়, তাই অনেকেই গুরুত্ব দেন না।

৪. আঙুলের ডগা মোটা হয়ে যাওয়া (Finger Clubbing) 

অনেকে ভাবেন, কারও কারও হাতের আঙুল এমনিতেই মোটা বা গোল হতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তন সবসময় স্বাভাবিক নয়। ধীরে ধীরে নখের চারপাশ ফোলাভাব নেয় এবং আঙুলের ডগা পেঁয়াজের মতো হয়ে যেতে পারে, যাকে বলে ক্লাবিং। এটি ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতির কারণে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যানসারের শুরুর দিকেই দেখা দেয়। যেহেতু এটি ব্যথাহীন এবং ধীরে গড়ে ওঠে, তাই সাধারণত মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়।

৫. এক ধরনের ক্লান্তি, যেটা ঘুমালেও দূর হয় না 

মানুষ ভাবে এই ক্লান্তিটা বুঝি কাজের চাপ, পরিবার সামলানো বা ঘুমের ঘাটতির জন্য হচ্ছে। কিন্তু ক্যানসারজনিত ক্লান্তি এসবের চেয়ে আলাদা। এটি আরও গভীর, দীর্ঘস্থায়ী এবং বিশ্রামেও কমে না। প্রাথমিক পর্যায়ের ফুসফুসের ক্যানসারে শরীর তখন থেকেই প্রতিক্রিয়া শুরু করে, রক্তে কিছু প্রদাহজনক উপাদান তৈরি হয়, যা এক ধরনের স্থায়ী অবসাদ তৈরি করে। যেহেতু এই ক্লান্তি আস্তে আস্তে বাড়ে, মানুষ সাধারণ ক্লান্তি ভেবে সেটিকে অবহেলা করে।

[এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক বা দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।]

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এম.কে.

×